সে এক নাগিনী
জীবনের অপচয়ে সব বিকিকিনি
শেষ হলে স্তিমিত চন্দ্রালোকে
অমোঘ লালসা নিয়ে আসে…
বেঁধে নিয়ে শত নাগ পাশে
নির্বাসন দেয় চিরতরে
অনুজ্জ্বল ক্ষয়াটে অতীতে।
সেই সে নাগিনী
বুভুক্ষু সেই স্বৈরিণী
দিনলিপি জীর্ণ হলে
বুকে হেঁটে আসে গিলে নিতে।
বাংলা কবিতা, বাংলা গদ্য.. মুচমুচে, খাস্তা, অনবদ্য। ছুটির দুপুরে হোক না যোগ.. যযাতির গল্প, ছড়া, ব্লগ।।
সে এক নাগিনী
জীবনের অপচয়ে সব বিকিকিনি
শেষ হলে স্তিমিত চন্দ্রালোকে
অমোঘ লালসা নিয়ে আসে…
বেঁধে নিয়ে শত নাগ পাশে
নির্বাসন দেয় চিরতরে
অনুজ্জ্বল ক্ষয়াটে অতীতে।
সেই সে নাগিনী
বুভুক্ষু সেই স্বৈরিণী
দিনলিপি জীর্ণ হলে
বুকে হেঁটে আসে গিলে নিতে।
ভালবাসার কথাই যখন হল…Happy Valentines Day!
তোমার জন্য বিরাম রেখেছিলাম
সময় করে নিও
দুপুর বেলায় স্মৃতির ভেলায় ভাসো
যদি কখনো প্রিয়
তোমার জন্য শিশির রেখেছিলাম
ঘাসের সমাদরে
ভোরবেলাতে কুড়িয়ে নিও যদি
আমায় মনে পড়ে
তোমার জন্য শাপলা ফুলের ঘাটে
জলতরঙ্গে রেখেছি জলছাপ
সময় করে বোসো, শুনতে পাবে
তোমার আমার নিহত সংলাপ
আমার শঙ্খ চুপটি পড়ে আছে
ইচ্ছে হলে ফুঁ দিও কখনো
দেখবে কেমন মধুর সমারোহে
উঠবে বেজে তোমার কঙ্কণও
এক বন্ধু বলছিল, তুমি তো এত ভাল গল্প লেখো, তবে কবিতার বই প্রকাশ করলে কেন? কবিতা তো কেউ পড়ে না। আমি বললাম, ধরো, যদি ঠিক সেই জন্যই। যাতে হ্যাজাকের সূর্যসম প্রভায় নরম কথাগুলো ঝলসে না যায়, যাতে জয়ী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে সামিল না হয়ে পরম সুখে পরাজিত হতে পারে আমার আত্মকথন, যাতে যুক্তিবাদী ও মস্তিষ্কসর্বস্ব মানুষের পরখ-করা-নখের নিষ্পেষণে রক্তাক্ত হতে না হয়, যাতে অষ্টমীর জগন্নাথ ঘাটের ফুলের বাজারে ফুলের মত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য পাঠক ও পঠিতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি দরাদরি না হয়…
বইটি পাওয়া যাবে কবিতা আশ্রমের স্টল 252 তে। 6 নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে সোজা গিয়ে লাস্ট স্টল। এটিই বইমেলার শেষ সপ্তাহান্ত। যদি বন্ধুদের কেউ স্বপ্ন সাজাও, যদি বন্ধুদের কেউ বইমেলায় যাও, ঘুরে দেখো কবিতা আশ্রমের স্টলটি। এর বেশি মার্কেটিং আমি করতে জানি না। বরং একটা কবিতা দিই আমার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল” থেকে। এ বইয়ে আমার কথা লেখা আছে। হ্যাঁ এ আমারই কথা। কোনো পাতায় হয়তো বা ধরা আছে কোকিলকূজিত নয়ানজুলির চর, কোথাও বা পলাশ রাঙানো বনমর্মর, কোথায় আমার চোখে ধরা পড়া সন্ধে নামার ক্ষণ, কোথাও আমারই আহত হৃদয় ক্রন্দন।
অভিমান
তুমি আমার কসাইখানা দেখতে পেলে
খুঁজে পেলে আমার হর্ম্যপ্রাসাদ
তোমার চোখে চেয়ে দু দণ্ড বাসর জাগল আমার চিলেকোঠা ছাদ
কিন্তু আমার মরু প্রান্তরের সন্ধান পেলে না
আমার হাত ধরে ঝিনুকের দেশে গেলে না
সহস্র বছরের একটানা বর্ষার পর
শোনা যায় যে ঝিল্লী মর্মর
আমার বুকের মধ্যে তার ধ্বনি অনুক্ষণ
সুপ্রিয়ে, কান পেতে শুনো কোনো দিন…
মানুষ তো চিরকালই অবয়বহীন।
স্ব বাবু যযাতিকে বললেন, মহারাজ, আপনি প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ।
মহারাজ যযাতি বললেন, সে ব্যাপারে আমি সম্যক রূপে অবগত। আগে বলো।
স্ব বাবু বললেন, শুনেছি মহান আর্যাবর্তে একটি নতুন ছায়াছবি প্রকাশ পেয়েছে। সেই নিয়ে খুব হৈ হৈ রৈ রৈ। নাম পাঠান।
মহারাজ যযাতি বললেন, অতি আশ্চর্য। ছবি হৈ হৈ করে চলছে অথচ তার নাম নির্ধারণ করা হয় নি? আমাকে নাম পাঠাতে বলছে?
আজ্ঞে না না। ছবির নামই পাঠান।
সে বুঝেচি। কিন্তু তারা নিজেরাই তো ছবির নাম ঠিক করতে পারে। তারা তো আর পাঁঠা নয় যে তাদের ছবির নাম আমায় পাঠাতে হবে!
মহারাজ, ছাড়ুন। শুনেছি সে ছবি নাকি নয় শো কোটি টাকার ব্যাবসা করেছে।
নয় শো কোটি মানে কত? এক পদ্ম না এক মহা পদ্ম?
আজ্ঞে, নয় পদ্ম। এক পদ্ম মানে হলে গে একশ কোটি।
সে আর এমন কি। বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে যে দাক্ষিণাত্য আছে, সেই স্থলে ছবি শুনতে পাই প্রায়শই এক মহাপদ্ম কি এক জলধি পর্যন্ত ব্যাবসা করে।
মহারাজ সর্বজ্ঞ। তবে অদ্দুর করে না মনে হয়। হাজার পদ্মে এক মহাপদ্ম। বাহুবলী বলে একটি ছবি পনের পদ্ম ব্যাবসা করেছিল। অর্থাৎ কিনা পনের শো কোটি।
বটে? তবে কোনো ছবি এর থেকে বেশি ব্যাবসা করে নি?
আজ্ঞে করেছে। সে ছবি এখন ছবি হয়ে গেছে। নাম আদানি।
ও। আদানি? সে কি আদার ব্যাপারী?
না না আদা না। আদানির আদান প্রদান বহুবিধ। একে বলে বিজনেস কংগ্লোমারেট। সে যাগগে। মহারাজা, যাবেন নাকি পাঠান দেখতে? চমৎকার ছবি। তবে মাথাটি শুনেছি হলের বাইরে খুলে রেখে যেতে হয় দেখতে।
তুমিই দেখো এসো বৎস। আমার এই বুড়ো হাড়ে আর জোর নেই তেমন। তার ওপর আমার মাথা আমার পরম প্রিয়। তা খুলে রাখতে রাজি নই। গল্পটি শুনিও দেখে এসে। যদি কিছু থাকে…
আমি কোনো কবিতা লিখি নি কখনো। আমার এই শরীর ও মন দোহন করে কোনো এক অমিত শক্তি যা বর্ণনাতীত এবং শব্দাতীত, যা essentially nonverbal, তেমনই এক শক্তি শব্দের সীমিত পরিসরে নিজেকে বর্ণিত করেছে মাত্র। কবিতা আসলে কোনো চিন্তা বা ভাবনা নয়, কবিতায় ধরার চেষ্টা করা হয় বোধ। কবিতায় লেগে থাকে অনুভব। আর এই বোধ বা অনুভব শব্দ দ্বারা অনুচ্ছিষ্ট। শব্দ তাকে ছুঁতে পারে নি কখনো। তবে প্রয়াস করেছে সতত। আর তাই কবি যুগে যুগে প্রহরে প্রহরে অপূর্ণতায় পীড়িত হয়েছেন। ঠিক যা বলতে চাই, তা যেন বলতে পারলাম না, এই সঙ্কট।
তবু কথা জমে ওঠে চুপি চুপি বর্ষা ঋতুর আকাশপটে বিন্দু বিন্দু বারিবিন্দুর মত। তবু কে যেন এক আমাদের সব চেয়ে অপ্রস্তুত সময়ে, মধ্যরাতে কি অফিস মীটিং এর মাঝে, নৃত্যরত ঝর্ণা ধারার মত শব্দ সায়র ভরে দেয় গভীরে গহনে। আর বলে আমায় সালঙ্কৃতা করো। আমায় জন্ম দাও। অব্যক্ত স্বেচ্ছায় ব্যক্ত হতে চায়। আমি অক্ষম। আমি অকিঞ্চিৎকর সেই ইচ্ছাশক্তির কাছে। তাকে রূপ দিই। অলঙ্কার দিই। ক্ষয়হীন অক্ষরকে অক্ষরে ধরি। এই আমার কবিতা। এর বেশি কিছু না। এ বোধ হয় পৃথিবীর সমস্ত কবিরই আত্মকথা।
সেই সব শব্দমালা পুস্তকাকারে প্রকাশ করব কখনো ভাবি নি। বড় ভয় হয় নিজেরই কর্মের আসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ি। কিন্তু বন্ধুবর অমিত উৎসাহ দিল। আমিও সম্মত হলাম। মনে ভয় কবিতার কাছে পৌঁছতে পেরেছি তো। তবে এক কবিবন্ধু বলেছিলেন কবিতা আদতে একা। পাঠকের সঙ্গে যুক্ত হলেই তার দ্বিত্ব ঘটে। হয়তো এই এক থেকে দুই, এক থেকে বহু হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই আমার কবিতাগুচ্ছ পাঠকের দরবারে পৌঁছতে চায়। কবিতার আত্মার কাছে পৌছতে পেরেছি কিনা এখন তো সে সিদ্ধান্ত পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি। কারণ বই মুদ্রণা হয়ে গেছে। এখন শুধুই প্রকাশের অপেক্ষা। বিভিন্ন জনারের কবিতা নিয়ে প্রস্তুত সঙ্কলনটি। আশা রাখছি, এবং দুরাশা রাখছি তার অন্তত কিছু শব্দবন্ধ আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। যদি কোনো একটি কবিতা আপনার বছর ঘোরার পরেও ফিরে গিয়ে পুনঃপাঠ করতে ইচ্ছা হয়, তখন জানব যে পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। পরীক্ষা কথাটি একটু ক্যাজুয়ালি বললাম। আমি মনে করি না এ কোনো পরীক্ষা। এই কবিতাগুচ্ছ আমার একান্ত আত্মকথন। তবে নিশ্চয়ই চাই এই আত্মকথন লোককথা হয়ে উঠুক। পাওয়া যাবে বইমেলা স্টল নাম্বার ২৫২।
মাঝে মাঝে সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে থাকে খেলার মরসুম। বাইরে তখন শীতঘুম। সাদা কাপড়ে মোড়া শীতবুড়ি। চালিয়ে দিয়েছে ছোরা, ঋণাত্মক কুড়ি।
শুনেছি প্রাণী মধ্যে mammals বা স্তন্যপায়ীরা সবচেয়ে কৌতুকপূর্ণ বা playful । এ কথা একদমই নয় ভুল। কিন্তু থাক সেসব ইকড়িমিকড়ি। জীববিদ্যা ফেলে চলুন আমরা গল্পে ফিরি।
বাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্যা চোখে আলো জ্বেলে বলে ওঠে, বাবা কি খেলবে? হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু প্লে। বাট আই রিয়েলি ডোন্ট হ্যাভ এ সে। আমায় ভাবার সুযোগ না দিয়েই বলে, হাইড অ্যান্ড সীক। আমি চোখের তারায় জোনাকি জ্বেলে বলি, ঠিক ঠিক। তাথৈ বলে, ওকে বাবা, ইউ কাউন্ট। আমি দেওয়ালের দিকে ফিরে হাত চোখে করি মাউন্ট। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে গুনতে থাকি, এক দুই তিন চার… তর সয় না তার। “বাবা আমি হাইড করেছি”। ব্যাস আমিও চোখ খুলে ফেলেছি। আর কাউন্ট করে কি কাজ, থাক। তাথৈ সোনাকে খোঁজা যাক। তা লুকিয়েছে সে, যেখানে কাউন্ট করছি সেখান থেকেই ফুট চারেক দূরে, সোফার আড়ালে। সেখান থেকে তার আওয়াজ আসছে যেমন করে আওয়াজ আসে কলে ইঁদুর পড়লে। উত্তেজনায় তার ছোটো শরীর থরো থরো। কিন্তু অমনি খুঁজে বের করলে কি ভাল দেখায় বড়ো? তাই বাবা এদিক যায়, ওদিক যায়। “তাথৈ তুমি কোথায়? আই অ্যাম কাআআমিং। তোমায় খুঁজে বের করা খুব শক্ত হচ্ছে ইদানীং”। এই সব বলি। সময় কিছু নষ্ট করে পৌঁছই সোফার কানাগলি। তাথৈ বলে ধাপ্পাআআ, আওয়াজ শোনা যায় রামতলা থেকে রাজারাপ্পা। অমনি আমিও করি, চমকে ওঠার ভানটি। সে সরলা তাই দেখে হেসেই কুটিপাটি।
এবার তার কাউন্ট করার পালা। কিন্তু একটাই ঝামেলা। আমার লুকোনোর স্পটটা সেই ঠিক করে দেয়…খুঁজে পেতে যাতে তার না হয় কষ্ট। তাথৈ এই সব ব্যাপারে খুব স্পষ্ট। “বাবা এইখানে বোসো, পা মোড়ো।” “আ মোলো। তুই যেখানে ঢুকতে পারিস সেখানে কি আমি ঢুকতে পারি, ছাই।” কিন্তু তর্ক করা বৃথাই। তার খেলার ভুবনে বাকবিতণ্ডার স্থান নাই। যাক বাবা, ঝামেলায় কাজ নাই। বেশি গোলমাল করলে তাথৈ বাজাবে সানাই। জুড়ে দেবে কান্না। বাবা তা চান না। কোনোভাবে বডিফ্রেম সেইখানে গুঁজে রাখি। নট-সো-টোনড মধ্যপ্রদেশ অর্থাৎ ভুঁড়িটিকে বলি, জাঁহাপন, মাফ করো গুস্তাখী। এই তো শুধু কাউন্ট টু টেন। তারপরই স্বাধীন হবেন। তাথৈ কাউন্ট শুরু করে। ওয়ান…টু…থ্রী…ফোর…ফাইভ…সিক্স…এইট। আমি বলি, “সেভেন সেভেন, তাথৈ সিক্সের পর সেভেন”। মাফ করবেন। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙেন, তেমনি বাবা কিম্বা মা হাইড অ্যান্ড সীকের মাঝেও শেখান, ওয়ান টু টেন। তাথৈ আবার গোনে, প্রথম থেকে, ওয়ান টু টেন। পুরো এক থেকে দশ। আমার পেট বলে, এবার ছেড়ে দে বস। তারপর তিনি আমায় খুঁজে পেতে আসেন যেখানে আগেই আমায় লুক্কায়িত রেখেছেন!! কিন্তু তাতে খেলা হয় না মাটি। ধাপ্পা দিলেই তাথৈ আবার হেসেই কুটিপাটি।
এই খেলাই রিপিট হতে থাকে দশবার বিশবার। প্রতিবারই তার কাছে একইরকম মজাদার। পুনরাবৃত্তি বোর করে আপনাকে আমাকে। কিন্তু হারায় নি সে চিন্তাস্রোতে জীবন পথের বাঁকে। সে যাই হোক, বাবা অর্থাৎ আমিও প্রতিবার মজা পাওয়ার অ্যাক্টো করি। ছোটো মানুষটাকে খিলখিলিয়ে হাসতে দেখে বুকের মধ্যে কুলু কুলু ধানসিঁড়ি।
জীববিদ্যা বলেছে কিনা, স্তন্যপায়ীরা হল গিয়ে ক্রীড়ামোদী! এইভাবেই রুনু ঝুনু বয়ে চলে জীবননদী। এইভাবেই দৈনন্দিন একঘেঁয়েমি হয়ে ওঠে যাদুবাস্তব, নিরবধি।
এক দিদি বললেন, তোমরা যারা লেখো, তোমাদের মাথার তন্ত্রীগুলো অন্য সুরে বাঁধা। আমি দড় কোনও লেখক নই। তবে লেখকের মাথা সম্বন্ধে দু এক কথা জানি। লেখকের মাথা অন্য তন্ত্রীতে বাঁধা? সত্যি কি তাই? লেখক/কবি কি ভাবে দেখে? কোন্ ঘটনা বা অঘটনকে সে করে নেয় কথকতার উপাদান? কেমনে সে ক্রমাগত গল্প খুঁজে পায় দৈনন্দিন একঘেঁয়েমি আর ক্লিন্নতায়?
কারণ অন্যে যেখানে জীবন দেখে, লেখক সেখানে যাপন দেখে। অন্যে যেখানে গন্তব্য দেখে, লেখক কেবল দেখে একটা পথ মাত্র যা আদতে কোথাও যায় না। এক শাশ্বত বর্তমানে সে পথ অনন্তকাল ধরে শুধুই থেমে আছে। শুধুই থেমে আছে। অন্যে যখন দেখে বস্তুনিচয়, লেখক দেখে একটি প্রবাহ মাত্র। পরম শূন্য থেকে নিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, পরম শূন্যেই স্থিত হচ্ছে আর সেই পরম শূন্যেই নিশ্চিতভাবে বিলীন হচ্ছে সেই সব বস্তু ছায়াপ্রতিমারা। অন্যে যখন দেখে কঠোর বাস্তব, কবি দেখেন প্রপঞ্চ। কবি বোঝেন, এ সকলই সতত পরিবর্তনশীল, অন্তঃসারশূন্য এবং স্বাধীন সত্তাবিহীন। ছায়ার মত চিদাকাশে ফুটে উঠছে নিয়ত আর নিয়ত অপসৃত হচ্ছে।। অন্যে যেখানে ক্রমাগত একা হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির খোঁজে সঙ্গ খুঁজে ফেরে অন্তর্জালে, সমাজমাধ্যমে, কবি সেখানে অনেকের সঙ্গে মিশেও সর্বতোভাবে অসঙ্গ। অন্যে যেখানে নিজের ব্যক্তিগত গল্পনদীর মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে, কবি দেখতে পাচ্ছে জীবন নদীবক্ষ আর নিরন্তর উৎসারিত ঊর্মিমালা। ঢেউ উঠছে, ঢেউ ভাঙছে। ঢেউ উঠছে, ঢেউ ভাঙছে। থুপ থুপ থুপ। আদি ও অনন্ত জল থেকে ঢেউ হয়ে জন্ম নিচ্ছে নাম-রূপ আর ক্ষণিক বাদে জল হয়ে মিশে যাচ্ছে তার সৃষ্টি উৎসে। তখন সে নামহীন, রূপাতীত। এক মুহূর্তে পৃথক অস্তিত্ব, অপৃথক পরমুহূর্তে। অন্যে যেখানে সারবত্তা খুঁজে পেতে মাথা খুঁড়ছে, কবি দেখছেন সংসার। সংসার কি? যা ক্রমাগত সরে সরে যায়, সেই তো সংসার। অন্য অর্থে যা চক্রাকারে আবর্তিত হয়, তাই সংসার। সেই সংসারে সং সাজা যায়, কিন্তু সার খুঁজে পাবে কেমন করে?
সার খোঁজা শেষ হলে তবে সার খুঁজে পাওয়া যায়। এই অস্তি এমনই স্ববিরোধী। তাই কবি/শিল্পী/লেখক শব্দে, তুলিতে, আলোছায়ায়, সুরে ধরে রাখে এই নিয়ত পরিবর্তনশীল শাশ্বত বর্তমানের ঠিক যতটুকু ধরে রাখা যায়। সেই শব্দরতিও ক্ষণিকের। সে শব্দমালাও ডুবে যাবে এক কৃষ্ণগহ্বরে যার নাম মহাকাল। মহাকালের গর্ভে বিলীন হবে সব যা দৃশ্য ও অদৃশ্য, সব যা শ্রুত ও অশ্রুত, সব প্রেম, সব আবিষ্ট থিরি থিরি কাঁপা অধর, সব যুথীমালা, সব অবাধ্য কবরীগুচ্ছ, সব বংশলতিকা, সব রাজপাট, সব চক্রান্ত, সব অসূয়া, সব নীহারিকা, সব নক্ষত্র, সব পাখি, সব নদী, এমনকি সব কবিতা। যা থেকে যাবে সে এক আদিম কবিতা। সে কবিতার রচয়িতৃ এক সন্ন্যাসিনী যে সঞ্চয় করতে শেখে নি।
স্ত্রী কহিলেন, জানো সানাই খুব মিথ্যে কথা বলতে শিখেছে।
আমি নিরুত্তর রহিলাম।
স্ত্রী কহিলেন, ওকে জিগ্যেস করলাম ভাত খাওয়ার পর কুলকুচি করেছিস কিনা। কনফিডেন্টলি বলল, হ্যাঁ। একটু চেপে ধরতেই ছুটল কুলকুচি করতে।
বেশ? মিথ্যে বলছে সেটা ভাল?
আমি বলিলাম, তুমি তো বলো, ও কোনো কম্মের না। সব কাজেই লবডঙ্কা। এই একটা কাজ তো ঠিক করে করছে। এই যে মিথ্যে বলাটা আয়ত্ত করেছে – এর ফলে দুটো কেরিয়ার পাকা।
কি কেরিয়ার?
রাজনীতিবিদ ওরফে দুর্নীতিবিদ আর উকিল।
জীবনের রঙ্গমঞ্চে সানাই নামক কুশীলবের প্রতিপক্ষ হিসেবেই অবতীর্ণ হতে হয় অধিকাংশ সময়। কারণ খাওয়া, পড়া, স্নান করা, দাঁত মাজা সবেতেই তার ঘোরতর আপত্তি। শুধু বিকেলবেলা স্কুল থেকে ফিরলে অনেকক্ষণের অদেখায় হয় ক্ষণিকের মধুমাস। তা আজ তেমনই বিকেলবেলা জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলাম,
সানাই তুমি চলে যাবে বড় হলে আমাকে ছেড়ে।
সানাই জোড়ে জোড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, না।
আরও একটু সঘন হয়ে বললাম, কেন? বাবা তো তোমায় বকে। তোমার কথায় বাবা তো মীন? (হ্যাঁ, আজকাল স্কুল থেকে mean কথাটা শিখে এসেছে এবং যথেচ্ছ ও লাগামছাড়া প্রয়োগ করছে। তবে আমায় মীন বললে আমি বলি, আমি মীন হলে তুমি মিডিয়ান। খুব রেগে গেলে বলি তুমি তাহলে স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশান। মিডিয়ান কি স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশান যত ভারি কথা হয় সানাই ভাবে বাবা তত ভারি গালাগালি করছে এবং জোড়ে জোড়ে কত্থক স্টাইলে পা ঠুকতে থাকে।)
সানাই বলল, না ছেড়ে যাবো না।
আমি বললাম, কেন, বাবা বকে তো?
সানাই বলল, হ্যাঁ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলল, কিন্তু তুমি আমাকে ফোন দাও……
শুধু ফোনের জন্য। চল ভাগ।
নিজের আত্মবিশ্বাস কড়াত শব্দে ভেঙ্গে গেছে। শুধু ফোন দি বলে ফন্দী করছে আমার সাথে থাকার…ভাবুন। সংসার সংসার। এ জন্যই তথাগত বলেছেন, শূন্যম শূন্যম সর্বম শূন্যম। সাধে শ্যামাসংগীত বলেছে,
ভেবে দেখ মন কেউ কারু নয়, মিছে ভ্রম ভূ-মন্ডলে।
যযাতির ঝুলি নিয়মিত পড়েন এরকম পাঠকের সংখ্যা ১০০ এর বেশি। তা আমাদের গুগল স্ট্যাট দেখলেই জানা যায়। নিষ্ঠা ভরে যযাতির ঝুলিটি উল্টে পাল্টে দেখার জন্য সকল পাঠকবর্গকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশ্বাস করুন পাঠকের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে অনুরণন তুলতে পেরেছি এই আশা নিয়েই আজও লিখি দু এক কলম।
আপনার যারা যযাতির ঝুলির একনিষ্ঠ পাঠক, আপনাদের সাথে একটি সুখবর ভাগ করে নিতে চাই। কবিতা আশ্রমের প্রকাশনায় লেখক স্বর্ভানু সান্যালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল”। পত্রভারতী থেকে লেখকের প্রথম গল্প গুচ্ছ বেরিয়েছিল ২০১৯ বইমেলায়। “যযাতির ঝুলি” বইটি পাঠককুলে সমাদৃত। এ বছর কলকাতা বইমেলায় ২৫২ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে কাব্য গ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল”। পরে পাওয়া যাবে অনলাইন ও কলেজ স্ট্রিটে। পাঠকের ভালবাসা এবারেও পাব এই আশা রাখি। সবিনয়ে অনুরোধ বইটিকে আপনার নিজস্ব সংগ্রহে স্থান দেবেন।
বইমেলা পরবর্তী সময়ে পাওয়া যাবে কলেজ স্ট্রীটে কবিতা আশ্রমের নিজের দোকানে অথবা দেশ বা ধ্যানবিন্দুতে। অনলাইন পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে