রামায়ণের জন্মকথা – কবিতা

मां निषाद प्रतिष्ठां त्वमगमः शाश्वतीः समाः।

यत्क्रौंचमिथुनादेकम् अवधीः काममोहितम्॥’

mā niṣāda pratiṣṭhā tvamagamaḥ śāśvatīḥ samāḥ

yat krauñcamithunādekam avadhīḥ kāmamohitam

You will find no rest for the long years of Eternity

For you killed a bird in love and unsuspecting

কামমোহিত এক পক্ষিযুগলের এক শিকারির শরাঘাতে মৃত্যু দেখে স্নানরত ঋষি বাল্মীকি গেয়ে উঠেছিলেন এই পুণ্যশ্লোকটি। সেই থেকেই আদি কবি বাল্মীকি লেখেন অমর প্রেমগাথা রামায়ণ। অতি রমণীয় রচনা এই রামায়ণ। সাহিত্যগুণে, কাব্যগুণে বোধ হয় মহাভারতের থেকেও শ্রেয়। সেই অমরকাব্য রচনার শুরুর সেই নাটকীয় মুহুর্তটি ধরার চেষ্টা করেছি। হয়তো একটু অন্য আঙ্গিকে গল্পটিকে উপস্থাপিত করেছি।

 

নীল জলেতে পা ডুবিয়ে এক সারস আর এক সারসি

মুগ্ধ দৃষ্টি, মুগ্ধ আত্মা, ওষ্ঠে খেলে মোহন হাসি

লজ্জা চোখে সারসি শুধোয় “আমায় তুমি ভালবাসো?”

“প্রাণে মোহনবীণা বাজে যখন তুমি কাছে আসো”

সারস বলে, একটু হেসে দীর্ঘ গ্রীবা বাঁকিয়ে চেয়ে

শিরায় শিরায় ধমনীতে বিদ্যুৎ তার যায় যে ধেয়ে

 

রোদ্দুর আজ একটু নরম, গায়ে মেঘের পশম চাদর

নদীর চরে ঘাসের পরে টুপটুপে চুপ শিশির আদর

কৃষ্ণচুড়া গাছের তলে লালসোহাগি রাশি রাশি

ভিজে হাওয়ায় লাগিয়ে নেশা রাখাল দুরে বাজায় বাঁশি

 

সারস এখন আরও ঘন, প্রিয়ার নরম আঙ্গুল ছুঁয়ে

সংযম আর বাঁধন যত হঠাৎ কেমন যাচ্ছে ধুয়ে

“আজ সকালে আমার মত এমন সুখি আছে কে জন

ওই চোখেতে জীবন আমার ওই ঠোঁটেতে আমার মরণ”

 

প্রিয়তমের নিবিড় ছোঁয়ায় কাঁপছে শরীর থরথর

পায়রা গরম প্রিয়ার বুকে উঠছে তপ্ত বালু ঝড়

“সাজিয়েছি এই শরীর আমার, সহস্র যুগ, কল্প ধরে

আজ যদি এই মিস্টি ভোরে, দিই তোমাকে, নিঃস্ব করে

যখন হবো সাঁঝের তারা, রাখবে আমায় অমর করে?”

প্রেম সোহাগি সারসি কয়, প্রিয়র গলা জড়িয়ে ধরে।

“মৃত্যু থেকে আনব কালি তোর কাহিনি লিখব বলে,

তোর ছবিটা আঁকব ছন্দে, ভাসবে সবাই নয়নজলে”

 

অকস্মাৎ প্রেমিক পাখি নীরব হল চিরতরে

বিঁধেছে এক সুতীক্ষণ তীর, বুকের থেকে রক্ত ঝরে

নিষ্ঠুর এক শিকারি ব্যাধ, বাণ ছুড়েছে সুযোগ বুঝে

মুগ্ধ নয়ন প্রিয়ার পানে, সারস পাখি চক্ষু বোজে

স্বজনহারা শোকাকুলা সারসির আঁখিতে অশ্রুধারা

তপ্ত লোহা পড়ছে গলে রুদ্ধ আবেগ কথা হারা

মরনপারেও সাথ দেবে সে চিরসাথির, পাগলপারা

রক্তজলে লুটিয়ে পড়ে স্থির হল তারও চক্ষুতারা

 

কাঁদছে সকাল, কাঁদছে নদী, বিষাদ বেদন বাজছে করুণ

অশ্রুজলে ঝাপ্সা নয়ন ব্যাথিত এক সৌম্য তরুণ

দুর্দান্ত এক দস্যু ছিল কঠোর নিঠুর পাষাণ হৃদয়

প্রেমময়ের নামটি গেয়ে এখন সে হৃদি করুণাময়

নয়ন ভরে দেখছিলেন তিনি পাখি দুটির মিলনমেলা

আচম্বিতে ব্যাধের শরে সাঙ্গ হল প্রানের খেলা

গন্ড বেয়ে অশ্রু ঝরে পক্ষি দ্বয়ের মৃত্যু শোকে

গভীর ব্যাথা গান হয়ে ফোটে হঠাৎ দুটি পুণ্য শ্লোকে

 

“অসতর্ক মিথুনরত প্রেমিকবরের প্রাণটি চুরি করে

অয়ি আর্য, তুমি শান্তি পাবে না অনন্তকাল ধরে”

 

দীর্ঘচঞ্চুর আত্মা যেন প্রবেশ করেছে প্রাণের পরে

কথা দিয়েছিল সে অমর কথা লিখবে প্রিয়তমার তরে

মৃত্যুপারের মসিলেখনিতে লিখবে সে তার প্রিয়ার কথা

তাই বুঝি সে নীথর পাখি হয়েছে ঋষির মর্মব্যাথা

 

ঋষি ভাবেন,

“লিখব আমি প্রেমকাহিনি অতল, অমর শেষ-না-হওয়া

যে প্রেমে আপন বিলিয়ে দেওয়া, কিছু না নিয়ে শুধুই দেওয়া

আমি আদি কবি, আমি অশ্রুত, আমি লিখব হাজার বছর ধরে

অসমাপ্ত এক প্রেমগাথা, রাখব তোদের অমর করে”

Leave a Reply