স্বৈরিণী

সে এক নাগিনী
জীবনের অপচয়ে সব বিকিকিনি
শেষ হলে স্তিমিত চন্দ্রালোকে
অমোঘ লালসা নিয়ে আসে…
বেঁধে নিয়ে শত নাগ পাশে
নির্বাসন দেয় চিরতরে
অনুজ্জ্বল ক্ষয়াটে অতীতে।

সেই সে নাগিনী
বুভুক্ষু সেই স্বৈরিণী
দিনলিপি জীর্ণ হলে
বুকে হেঁটে আসে গিলে নিতে।

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে

ভালবাসার কথাই যখন হল…Happy Valentines Day!

তোমার জন্য বিরাম রেখেছিলাম
সময় করে নিও
দুপুর বেলায় স্মৃতির ভেলায় ভাসো
যদি কখনো প্রিয়


তোমার জন্য শিশির রেখেছিলাম
ঘাসের সমাদরে
ভোরবেলাতে কুড়িয়ে নিও যদি
আমায় মনে পড়ে


তোমার জন্য শাপলা ফুলের ঘাটে
জলতরঙ্গে রেখেছি জলছাপ
সময় করে বোসো, শুনতে পাবে
তোমার আমার নিহত সংলাপ


আমার শঙ্খ চুপটি পড়ে আছে
ইচ্ছে হলে ফুঁ দিও কখনো
দেখবে কেমন মধুর সমারোহে
উঠবে বেজে তোমার কঙ্কণও

বর্ষারাতে

লাজুক হাওয়া আলগা ছুঁল চুল
নরম বালিশ চিবুক ছুঁয়ে থাক
না হয় তুমি গল্পে মশগুল
আঙুল ছুঁল আঙুল অযথা
.
পলাশ তোমায় দিক, রাঙিয়ে দিক
আশমানী রঙ অঙ্গশোভা হোক
বৃষ্টি নামুক, অন্ধ দিকবিদিক
কথারা আজ থামুক, অনর্থক
.
বেতস লতা শিউরে উঠে চুপ
পদ্মডাঁটা আবেশে থির থির…
আলগা খোঁপা কখন যে তছরুপ
ভাঙুক না পাড় জোছনা নদীটির
.
আঝোর ধারায় ভিজুক বনফুল
পথিক চিনুক অচেনা পথঘাট
নকশি-কাঁথা বুনুক কাঁটা-উল
সাক্ষী থাকুক ভুবনডাঙার মাঠ

woman wearing blue and white skirt walking near green grass during daytime

সহচরী

আমি তোমায় ভালোবাসি।
দেবদারু গাছের নিচে বাতাস কেঁদে মরে
চাঁদ ধোয়া জল পরিত্যক্ত নোনা ধরা নৌকায় ঘাই মারে
তোমার আমার মাঝে অনন্ত জলরাশি।

একলা বন্দর। আমি বসে থাকি ঠায়
আমার আত্মা ধুয়ে যায় আকাশগঙ্গায়।
নিস্তব্ধ চারিধার
সমুদ্রের জান্তব গর্জনও প্রত্নতত্ত্বের মত নীরব।
সাদা ফ্যাটফেটে রংহীন পৃথিবী
তুমি শুধু একটু পলাশ।

আমি তোমায় ভালবাসি।
তবু দিগন্ত তোমায় চুরি করে নিয়ে যায়।
দিকভ্রান্ত মুমূর্ষু জাহাজে করে
আমার তোমাকে না-লেখা-চিঠিরা ভাসে অনির্দেশে

পরম আশ্চর্য সন্ধ্যা নামে।
তোমার আয়ত চোখ ধার নিয়ে চেয়ে থাকে সন্ধেতারা নির্নিমেষ
আমি সহবাসে তৃপ্ত নাগরের মত নিদ্রা যাই।
ভুলে যাওয়া গানের কলির মত তখন
তুমি ফিরে ফিরে আসো সহচরী।

পুজোর গান

তোমার আমার দেখা হবে সন্ধ্যা হলে আলোক নদীর পারে…
কথারা সব নিভবে, উজান
আনবে বয়ে অপূর্ব গান
আমার সকল অপূর্ণতা মিশবে তোমার অসীম অন্ধকারে।।


তোমার হাতে হাতটি রেখে হাঁটব আমি অমৃত পথ ধরে…
তোমার দু চোখ অশ্রু সজল,
আমার যত পথের ফসল
সকল গিয়ে মিশবে তোমার অনন্তমূল বিশ্বপরিসরে।।


তোমার সুরে সুর মেলাবো সুমন্দ্রিত অলোক বন্দিশে…
চোখের পাতায় ঘুম জড়াবে,
সকল অহং ঠিক মেলাবে
আমার সকল কর্কশতা মধুর হবে তোমার সুরে মিশে।।


আমার খাঁচার অচিন পাখি যেদিন যাবে অনন্ত উড়ানে…
তোমার চোখে চোখটি রেখে,
সূর্যসলিল বক্ষে মেখে
মিশব জানি, মোহন, তোমার অলীক সুতোর অঙ্গ পরিধানে।।

শুভ শারদীয়া

চল্লিশের জন্মদিনে…

ফিরতে আমার রাত্রি হতে পারে
ঘুমিয়ে তুমি পড়বে না তো মা?
আমার অনেক কথা বলা বাকি
তুমি কিন্তু শয্যা নিও না

তোমার পাশে পাশে হেঁটেছিলাম
ভোরের নরম শিশির ভেজা ঘাসে
এখন ধুলোয় ওষ্ঠাগত প্রাণ
আমার বুঝি সন্ধ্যা নেমে আসে

তোমার আঁচল অমনি পাতা আছে
বুকের মাঝে নদীর ছলো ছলো
পথে পথে অনেক ঘুরে ঘুরে
আজ কিভাবে পথ খুঁজে পাই বলো?

আমার ফিরতে রাত্রি হতে পারে
একটু আলো জ্বালিয়ে রেখো ঘরে
ভালই ছিলাম গর্ভে, অন্ধকারে…
এখন আঁধার দেখলে ভয় করে

দেখেছো, বলতে ভুলেই গেছিলাম
যতবারই গিয়েছি নদীতীরে
দেখেছি হংস ঐ সুদূরে যায়
নিস্তরঙ্গ জলের বুক চিরে

নির্জন

চোখ অনন্তের নির্জনতম সৃষ্টি মনে হয়
কত অস্তগামী সূর্য সলিল
কত ফুল, কত পাখি মরকত নীল
সে ধরেছে তার গহিন তারায়
তবু যেন ক্ষণে ক্ষণে সকলই হারায়
সব কিছু হয়ে যায় ক্ষয়
কিছুই সে রাখে না সঞ্চয়

এটুকুও জানেনা সে হায়
দু আঙুল দূরে বসে ঠায়
তারই মত আরও এক শুন্য আর উপোসী হৃদয়...

জন্মদিনের সকালে

ফিরতে আমার রাত্রি হতে পারে
ঘুমিয়ে তুমি পড়বে না তো মা?
আমার অনেক কথা বলা বাকি
তুমি কিন্তু শয্যা নিও না

তোমার পাশে পাশে হেঁটেছিলাম
ভোরের নরম শিশির ভেজা ঘাসে
এখন ধুলোয় ওষ্ঠাগত প্রাণ
আমার বুঝি সন্ধ্যা নেমে আসে

তোমার আঁচল অমনি পাতা আছে
বুকের মাঝে নদীর ছলো ছলো
পথে পথে অনেক ঘুরে ঘুরে
আজ কিভাবে পথ খুঁজে পাই বলো?

আমার ফিরতে রাত্রি হতে পারে
একটু আলো জ্বালিয়ে রেখো ঘরে
ভালই ছিলাম গর্ভে, অন্ধকারে…
এখন আঁধার দেখলে ভয় করে

দেখেছো, বলতে ভুলেই গেছিলাম
যতবারই গিয়েছি নদীতীরে
দেখেছি হংস ঐ সুদূরে যায়
নিস্তরঙ্গ জলের বুক চিরে

অনন্ত সন্ধান

আমাকে যতটা তুমি চিনেছ প্রবাল
তার থেকে আরও বেশি নীল আমি দীর্ণ ব্যাথাতুর
সন্ধেতারার মত চুপ করে চেয়ে আছি পৃথিবীর পানে
ক্লিন্ন হতে থাকা দিনান্তের সূর্যেরা জানে
কত ভগ্ন জীর্ণ মন্দিরের গোপন চাতালে
ভিক্ষা পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছি আমি। শালে ও পিয়ালে
দীর্ঘতম ছায়ার শরীর দিয়ে ঢেকেছে আমার
মৃত্যু ও মিথ্যা। মরা কথাদের ক্লান্ত সমাহার
ভীড় করে এসেছে আমায় ছুঁতে
অযুতে নিযুতে
কনকচন্দন সুবাসিত সুরম্য শরীরে
মরা তারাদের অর্থহীন ভিড়ে
হেঁটে গেছি ছায়ার মতন

খুঁড়ে দেখো প্রবাল খুঁড়ে দেখ এ হৃদয় গহন
হয়তো খুঁজে পাবে চেনা বাস্তুসাপ
কিম্বা সহস্র বছরের পুরোনো জলছাপ
যে সকল গোপন কোটর
শব্দেরা ছোঁয় নি কখনো, রাত্রিভর
সেইসব অনুভব খুঁজে ফিরি আমি।
জানে, সে কথা জানে আমার অন্তর্যামী।
আমার শুধুই খোঁজা, কেবল সন্ধান
অনন্ত রাত্রি ধরে আমার অলীক শম্পান
শব্দ ফিরি করে ফেরে জীবনের বন্দরে বন্দরে
মৌন মুখর আমি একা জাগি রাত্রি নদী চরে।