তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। সন্ধ্যা যখন সঞ্চারিত, রৌদ্রকণা মৃত্যু ভীত, গোপন ব্যথায় জর্জরিত চুপপ্রহরে প্রিয়ম্বদা তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। . তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। বিষণ্ণ এক শর্বরীতে, আলগা খোঁপার আলগা শ্রী তে নরম তোমার ওষ্ঠ ছুঁতে শুকশরীরে প্রিয়ম্বদা তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। . তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। অলস কোনো দুপুরবেলায় মানসশরীর স্মৃতির ভেলায় আকাশ মাটির মিলনমেলায় আচম্বিতে প্রিয়ম্বদা তোমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। . তোমার কাছে যাওয়ার কথা আছে। খাক লেলিহান চিতায় পুড়ে, তীব্র দহন শরীর জুড়ে বুকফাটা দিকশূন্যপুরে শেষের দিনে প্রিয়ম্বদা তোমার কাছে যাওয়ার কথা আছে।
কতদূর থেকে আমি এই অব্যয় শরীর নিয়ে ভেসে ভেসে এসেছি তোমাদের সাগর সঙ্গমে। তোমাদের নগর কীর্তনে সং সেজে দু হাত তুলে ববম ববম নৃত্য করেছি। তারপর সমাচ্ছন্ন রাত্রি নদী বেয়ে মৃত শব্দদের ক্লান্তিকর সমাবেশে গেছি। আমাকে চার দিক থেকে আবহ সঙ্গীতের মত ছেঁকে ধরেছে অন্ধকার। সুখী বেড়ালেরা এসে শরীর ঘষেছে শরীরে। আহা কি নরম! আহা কি প্রমত্ত বেদনা! নীড় ভাঙা পাখিদের বিধুর সঙ্গীত আমি মজলিশি আড্ডায় বসে শুনেছি একাকী। ভীড় করে এসেছে সাপেরা। নীলের ছোবল আমি সানন্দে নিয়েছি জিভ পেতে। মহা তিমির অর্ণব সন্তরণ করে এসে আমি বেলাভূমিতে শরীর এলিয়ে দিয়েছি। নরম নক্ষত্রেরা আমার নির্মোক শরীর চেখে দেখেছে নেহাত কৌতূহলবশে। মধ্যযামে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের সাথে রমণ করেছি আমি কত কত বার। পথের দিশারী বৃদ্ধ কাছিমেরা শুন্য দৃষ্টি মেলে লেহন করেছে আমার সবুজ। আমার সমস্ত আরব্ধ কর্ম সাঁত করে গিলে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে একটা অন্ধকার ব্যাঙ। প্রতিদিন ক্লিন্ন হচ্ছি। প্রতিদিন চুরি যাচ্ছে প্রত্যয়।
সন্ধেতারা জ্বলে ওঠা মরা বিকেলে তাই আমি ঝুমকোলতাদের মত ভীড় করে করছি আকণ্ঠ সূর্যপান। আমার শরীর জুড়ে শুষে নিচ্ছি কবেকার পুরাতন আলো। হে প্রেম, হে অপ্রেম, জ্বালো আমায় জ্বালো। প্রদীপের মত দীপ্ত করো আমার এই শরীর সমিধ।
নিহত সময়। স্মৃতি আলপথ ধরে এইক্ষণে হেঁটে আসা যায়। . স্তব্ধ প্রহর। মুখোমুখি আমি আর আমি বসে। চিলেকোঠা ঘর। . মৃত্যু ভ্রমরী বলে গেল, এইবার এইবার চুপিসারে নামবে শর্বরী। . রাত্রি নিঝুম। কথকতা শেষ। আজ চুপকথাদের মরসুম।
শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে
ইবোলার নাকি বাবার বিয়ে?
করোনাকে পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে?
মন্দ নয়, সে পাত্র ভাল
মন যদিও বেজায় কালো
তার উপরে মুখের মুকুর
ঠিক যেন এক সুয্যি ঠাকুর
বিট্লে বুদ্ধি? বলছি মশাই
ধন্যি ছেলে অধ্যবসায়
হাজার তিনেক নামিয়ে চীনে
ইটালি ঘোরার টিকিট কিনে
এখন করছে ইউ এস ট্রিপ
শুনেই কেমন বুক ঢিপঢিপ
মান সম্মান? অনেক আছে…
দেখলে সবাই পালিয়ে বাঁচে
মানুষ তো নয় বোনগুলো তার
একটা নিপা, একটা শুয়ার –
ইংরেজিতে সোয়াইন ফ্লু গো
পালা পড়লে পুরো ঘেঁটে ঘ
কনিষ্ঠটির ই-কোলি নাম
পেটের রোগের ভোগান্তি দ্যান
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর
সার্স (SARS) বংশের বংশধর
চিকেনগুনিয়া মধ্যমগাঁ-র
কি যেন কে হয় করোনার
যা হোক বাবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে?
শ্যামল রাত্রি তুমি এসো আমায় নিয়ে যাও আগুনঝোরার বনে যেখানে কোনো এক দুরন্ত ফাল্গুনে ফুটেছিল রাশি রাশি অমলতাস ফুল। ফুটেছিল? নাকি সে আমার মনের ভুল? জানি না..জানি না ফুলেদের মৃতদেহ ঝরে কেন ঘাসেদের চাদরে আদরে, কেন মর্মব্যথা জেগে থাকে পৃথিবীর বিজন প্রান্তরে, কেন রুদ্ধ সঙ্গীত বাজে অন্তরে অন্তরে? ক্ষুধা জেগে থাকে বুভুক্ষু মনে মন পোড়ে, পোড়ে মন তুষের আগুনে। রাতচরা পাখিদের গান আর বুকভরা নীরব অভিমান লেগে থাকে শিশিরের গায়, আমি শুধু বসে থাকি ঠায়। খোলা পরে থাকে সাদা পাতা ব্যর্থ কোনো ব্যর্থ প্রেমগাথা শরীর পেতে চায়। এক প্রাচীন পাখির কণ্ঠে বিঁধে থাকে তীর, রক্ত ঝরে বিধুর সঙ্গীতে। বিষাক্ত কীটের মত দংশাতে আসে কোনো বিষধর সাপ – ঠোঁটে লেগে থাকে তার সহস্র বছরের পুরাতন পাপ, রক্ত মাংস মজ্জা মেদ জুড়ে থাকে স্তূপীকৃত ক্লেদ।
ক্লিন্ন পৃথিবী, হে ক্লিন্ন পৃথিবী রাত্রি সর্বজ্ঞ নয় এ আমার একান্ত বিশ্বাস। প্রতি নিশ্বাসে তাই অভিসার অনাগত দিনে যেখানে অরণ্যের গহনে গহীনে অমল অরূপ এক আলো খেলা করে। গাছেদের একান্ত জঠরে জীবনের স্বাদ মাখামাখি জড়াজড়ি। এইখানে এইখানে নিহত শর্বরী এইখানে এসে আমি দুদন্ড বসি, খেলা করি। অনলস ঝরে পরে অজস্র মেহুল। তান ওঠে, ঐকতান, সুগভীর নাভীমূল থেকে – “একা নই একা নই আমরা তো সুমধুর কবিতা প্রত্যেকে”