আমি কোনো কবিতা লিখি নি কখনো। আমার এই শরীর ও মন দোহন করে কোনো এক অমিত শক্তি যা বর্ণনাতীত এবং শব্দাতীত, যা essentially nonverbal, তেমনই এক শক্তি শব্দের সীমিত পরিসরে নিজেকে বর্ণিত করেছে মাত্র। কবিতা আসলে কোনো চিন্তা বা ভাবনা নয়, কবিতায় ধরার চেষ্টা করা হয় বোধ। কবিতায় লেগে থাকে অনুভব। আর এই বোধ বা অনুভব শব্দ দ্বারা অনুচ্ছিষ্ট। শব্দ তাকে ছুঁতে পারে নি কখনো। তবে প্রয়াস করেছে সতত। আর তাই কবি যুগে যুগে প্রহরে প্রহরে অপূর্ণতায় পীড়িত হয়েছেন। ঠিক যা বলতে চাই, তা যেন বলতে পারলাম না, এই সঙ্কট।
তবু কথা জমে ওঠে চুপি চুপি বর্ষা ঋতুর আকাশপটে বিন্দু বিন্দু বারিবিন্দুর মত। তবু কে যেন এক আমাদের সব চেয়ে অপ্রস্তুত সময়ে, মধ্যরাতে কি অফিস মীটিং এর মাঝে, নৃত্যরত ঝর্ণা ধারার মত শব্দ সায়র ভরে দেয় গভীরে গহনে। আর বলে আমায় সালঙ্কৃতা করো। আমায় জন্ম দাও। অব্যক্ত স্বেচ্ছায় ব্যক্ত হতে চায়। আমি অক্ষম। আমি অকিঞ্চিৎকর সেই ইচ্ছাশক্তির কাছে। তাকে রূপ দিই। অলঙ্কার দিই। ক্ষয়হীন অক্ষরকে অক্ষরে ধরি। এই আমার কবিতা। এর বেশি কিছু না। এ বোধ হয় পৃথিবীর সমস্ত কবিরই আত্মকথা।
সেই সব শব্দমালা পুস্তকাকারে প্রকাশ করব কখনো ভাবি নি। বড় ভয় হয় নিজেরই কর্মের আসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ি। কিন্তু বন্ধুবর অমিত উৎসাহ দিল। আমিও সম্মত হলাম। মনে ভয় কবিতার কাছে পৌঁছতে পেরেছি তো। তবে এক কবিবন্ধু বলেছিলেন কবিতা আদতে একা। পাঠকের সঙ্গে যুক্ত হলেই তার দ্বিত্ব ঘটে। হয়তো এই এক থেকে দুই, এক থেকে বহু হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই আমার কবিতাগুচ্ছ পাঠকের দরবারে পৌঁছতে চায়। কবিতার আত্মার কাছে পৌছতে পেরেছি কিনা এখন তো সে সিদ্ধান্ত পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি। কারণ বই মুদ্রণা হয়ে গেছে। এখন শুধুই প্রকাশের অপেক্ষা। বিভিন্ন জনারের কবিতা নিয়ে প্রস্তুত সঙ্কলনটি। আশা রাখছি, এবং দুরাশা রাখছি তার অন্তত কিছু শব্দবন্ধ আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। যদি কোনো একটি কবিতা আপনার বছর ঘোরার পরেও ফিরে গিয়ে পুনঃপাঠ করতে ইচ্ছা হয়, তখন জানব যে পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। পরীক্ষা কথাটি একটু ক্যাজুয়ালি বললাম। আমি মনে করি না এ কোনো পরীক্ষা। এই কবিতাগুচ্ছ আমার একান্ত আত্মকথন। তবে নিশ্চয়ই চাই এই আত্মকথন লোককথা হয়ে উঠুক। পাওয়া যাবে বইমেলা স্টল নাম্বার ২৫২।
