বই প্রকাশঃ বনধুতরোর ফুল

এক বন্ধু বলছিল, তুমি তো এত ভাল গল্প লেখো, তবে কবিতার বই প্রকাশ করলে কেন? কবিতা তো কেউ পড়ে না। আমি বললাম, ধরো, যদি ঠিক সেই জন্যই। যাতে হ্যাজাকের সূর্যসম প্রভায় নরম কথাগুলো ঝলসে না যায়, যাতে জয়ী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে সামিল না হয়ে পরম সুখে পরাজিত হতে পারে আমার আত্মকথন, যাতে যুক্তিবাদী ও মস্তিষ্কসর্বস্ব মানুষের পরখ-করা-নখের নিষ্পেষণে রক্তাক্ত হতে না হয়, যাতে অষ্টমীর জগন্নাথ ঘাটের ফুলের বাজারে ফুলের মত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য পাঠক ও পঠিতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি দরাদরি না হয়…

বইটি পাওয়া যাবে কবিতা আশ্রমের স্টল 252 তে। 6 নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে সোজা গিয়ে লাস্ট স্টল। এটিই বইমেলার শেষ সপ্তাহান্ত। যদি বন্ধুদের কেউ স্বপ্ন সাজাও, যদি বন্ধুদের কেউ বইমেলায় যাও, ঘুরে দেখো কবিতা আশ্রমের স্টলটি। এর বেশি মার্কেটিং আমি করতে জানি না। বরং একটা কবিতা দিই আমার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল” থেকে। এ বইয়ে আমার কথা লেখা আছে। হ্যাঁ এ আমারই কথা। কোনো পাতায় হয়তো বা ধরা আছে কোকিলকূজিত নয়ানজুলির চর, কোথাও বা পলাশ রাঙানো বনমর্মর, কোথায় আমার চোখে ধরা পড়া সন্ধে নামার ক্ষণ, কোথাও আমারই আহত হৃদয় ক্রন্দন।

অভিমান


তুমি আমার কসাইখানা দেখতে পেলে
খুঁজে পেলে আমার হর্ম্যপ্রাসাদ
তোমার চোখে চেয়ে দু দণ্ড বাসর জাগল আমার চিলেকোঠা ছাদ

কিন্তু আমার মরু প্রান্তরের সন্ধান পেলে না
আমার হাত ধরে ঝিনুকের দেশে গেলে না
সহস্র বছরের একটানা বর্ষার পর
শোনা যায় যে ঝিল্লী মর্মর
আমার বুকের মধ্যে তার ধ্বনি অনুক্ষণ
সুপ্রিয়ে, কান পেতে শুনো কোনো দিন…

মানুষ তো চিরকালই অবয়বহীন।

বই প্রকাশ

যযাতির ঝুলি নিয়মিত পড়েন এরকম পাঠকের সংখ্যা ১০০ এর বেশি। তা আমাদের গুগল স্ট্যাট দেখলেই জানা যায়। নিষ্ঠা ভরে যযাতির ঝুলিটি উল্টে পাল্টে দেখার জন্য সকল পাঠকবর্গকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশ্বাস করুন পাঠকের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে অনুরণন তুলতে পেরেছি এই আশা নিয়েই আজও লিখি দু এক কলম।

আপনার যারা যযাতির ঝুলির একনিষ্ঠ পাঠক, আপনাদের সাথে একটি সুখবর ভাগ করে নিতে চাই। কবিতা আশ্রমের প্রকাশনায় লেখক স্বর্ভানু সান্যালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল”। পত্রভারতী থেকে লেখকের প্রথম গল্প গুচ্ছ বেরিয়েছিল ২০১৯ বইমেলায়। “যযাতির ঝুলি” বইটি পাঠককুলে সমাদৃত। এ বছর কলকাতা বইমেলায় ২৫২ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে কাব্য গ্রন্থ “বনধুতরোর ফুল”। পরে পাওয়া যাবে অনলাইন ও কলেজ স্ট্রিটে। পাঠকের ভালবাসা এবারেও পাব এই আশা রাখি। সবিনয়ে অনুরোধ বইটিকে আপনার নিজস্ব সংগ্রহে স্থান দেবেন।

বইমেলা পরবর্তী সময়ে পাওয়া যাবে কলেজ স্ট্রীটে কবিতা আশ্রমের নিজের দোকানে অথবা দেশ বা ধ্যানবিন্দুতে। অনলাইন পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে

https://kabitaashram.com/shop/

Jojatir Jhuli – Baro Kahon, a feedback

In the field of writing fiction, unbiased feedbacks are hard to get. I write for different magazines both printed and digital without a clue if anyone has ever read any of my body of works. It is hard work to make a palatable story, so feedback motivates. All authors, famous or rarely read (like me), have to resort to social media to promote his work. We put our stories verbatim in our facebook wall in order to earn some readership. Most of your friends and families ignore. Some reacts with a word of praise or two. But you are never sure if that appreciation is colored based on your social status, personal warmth or your chemistry with the person. An objective evaluation of art can never be done if the art connoisseur knows the artist personally.

But rarely, very rarely, comes moments which rekindles your passion of writing. Today was such a day. I keep checking google ranking of my literary website “Jojatir Jhuli” from time to time. This motivates me because google’s world class ranking algorithm consistently attributes a fairly good page index to my website.

Today while searching for google rank of my website “Jojatir Jhuli”, I found that I got an entry in goodreads August, last year. A person named Ranjan Ganguly who apparently read my published short story collection “Jojatir Jhuli: Baro Kahon” gave a feedback in goodreads. Ranjan, I dont know you and may be I will never know you but that is precisely why your word of appreciation truly motivates me. I don’t know if some of my stories are as good as Ray’s or not but I will leave it to posterity to judge that.

বাংলা লাইভে প্রকাশিত আমার কবিতাগুচ্ছ

১)

বলো সমারোহ
ফুঁড়ে দিলে বল্লমের ফলা
কদর্য বিশ্রী সব ছলাকলা
দিয়ে দীন হৃদয় ভরালে
আমাকে রাখলে তুমি আমার আড়ালে

হাসো সমারোহ
খল খল হাসো
তোমার অগ্নিতে দগ্ধ কতশত অপূর্ণ হৃদয়
তোমারি তো হয়েছে আজ জয়
ক্রূর বাদ্যে নৃত্য করো অভুক্ত জঠরের মতো
যা কিছু নান্দনিক সুস্থ সংযত
লোভ আর স্পৃহা দিয়ে সবই লেপে দিলে
পৃথিবী ভাগাড় হবে, কুড়ে খাবে শকুনে ও চিলে

অন্য কবিতাগুলি পড়তে আসুন বাংলা লাইভে। 

https://banglalive.com/poetry-of-emotions/

জন্মদিনের সকালে

ফিরতে আমার রাত্রি হতে পারে
ঘুমিয়ে তুমি পড়বে না তো মা?
আমার অনেক কথা বলা বাকি
তুমি কিন্তু শয্যা নিও না

তোমার পাশে পাশে হেঁটেছিলাম
ভোরের নরম শিশির ভেজা ঘাসে
এখন ধুলোয় ওষ্ঠাগত প্রাণ
আমার বুঝি সন্ধ্যা নেমে আসে

তোমার আঁচল অমনি পাতা আছে
বুকের মাঝে নদীর ছলো ছলো
পথে পথে অনেক ঘুরে ঘুরে
আজ কিভাবে পথ খুঁজে পাই বলো?

আমার ফিরতে রাত্রি হতে পারে
একটু আলো জ্বালিয়ে রেখো ঘরে
ভালই ছিলাম গর্ভে, অন্ধকারে…
এখন আঁধার দেখলে ভয় করে

দেখেছো, বলতে ভুলেই গেছিলাম
যতবারই গিয়েছি নদীতীরে
দেখেছি হংস ঐ সুদূরে যায়
নিস্তরঙ্গ জলের বুক চিরে

শরীর সমিধ

কতদূর থেকে আমি এই অব্যয় শরীর নিয়ে ভেসে ভেসে এসেছি তোমাদের সাগর সঙ্গমে। তোমাদের নগর কীর্তনে সং সেজে দু হাত তুলে ববম ববম নৃত্য করেছি। তারপর সমাচ্ছন্ন রাত্রি নদী বেয়ে মৃত শব্দদের ক্লান্তিকর সমাবেশে গেছি। আমাকে চার দিক থেকে আবহ সঙ্গীতের মত ছেঁকে ধরেছে অন্ধকার। সুখী বেড়ালেরা এসে শরীর ঘষেছে শরীরে। আহা কি নরম! আহা কি প্রমত্ত বেদনা! নীড় ভাঙা পাখিদের বিধুর সঙ্গীত আমি মজলিশি আড্ডায় বসে শুনেছি একাকী। ভীড় করে এসেছে সাপেরা। নীলের ছোবল আমি সানন্দে নিয়েছি জিভ পেতে। মহা তিমির অর্ণব সন্তরণ করে এসে আমি বেলাভূমিতে শরীর এলিয়ে দিয়েছি। নরম নক্ষত্রেরা আমার নির্মোক শরীর চেখে দেখেছে নেহাত কৌতূহলবশে। মধ্যযামে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের সাথে রমণ করেছি আমি কত কত বার। পথের দিশারী বৃদ্ধ কাছিমেরা শুন্য দৃষ্টি মেলে লেহন করেছে আমার সবুজ। আমার সমস্ত আরব্ধ কর্ম সাঁত করে গিলে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে একটা অন্ধকার ব্যাঙ। প্রতিদিন ক্লিন্ন হচ্ছি। প্রতিদিন চুরি যাচ্ছে প্রত্যয়।

সন্ধেতারা জ্বলে ওঠা মরা বিকেলে তাই আমি ঝুমকোলতাদের মত ভীড় করে করছি আকণ্ঠ সূর্যপান। আমার শরীর জুড়ে শুষে নিচ্ছি কবেকার পুরাতন আলো। হে প্রেম, হে অপ্রেম, জ্বালো আমায় জ্বালো। প্রদীপের মত দীপ্ত করো আমার এই শরীর সমিধ।

লাথি ঝাঁটা

শুনেছি বয়সকালে ছেলেমেয়ের কাছে লাথি ঝাঁটা খেতে হয়। আমার “বয়সকাল” হয়েছে কিনা জানি না কিন্তু কালে কালে বয়স তো কম হল না। বয়সকাল হয়েছে না বয়সটাই কাল হয়েছে বলতে পারব না, আর ঝাঁটাটা ভবিষ্যতে বরাদ্দ হবে কিনা জানি না কিন্তু লাথি বরাদ্দ হচ্ছে এখন থেকেই।

আমাদের বাড়ির নতুন সদস্য, বয়সে নেহাতই নবীন। তিনি পৃথিবীকে অনুগ্রহ করার পর থেকে একটাই বছর ঘুরেছে, মানে তাঁর বয়স এই মাত্র এক বছর। কিন্তু হলে কি হবে, নিশ্চয়ই আগের জন্মে লিটল বম্ব  তাথৈ দেবী চুনি গোস্বামী থেকে থাকবেন কারণ পা দুটি পুরো ফুটবল-বলিষ্ঠ। ক্ষুদ্র বলিয়া তুচ্ছ নই এই নীতিকথা অনুসরণ করে তিনি সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে, মানে যাকে বলে পাখি ডাকা ভোর থেকে (আমার জন্য অবশ্যই অর্ধেক রাত্রি) পদাঘাত করতে শুরু করেন মানে কাঁচা বাংলায় লাথি মারতে শুরু করেন। বক্তব্যটা হল আমার যখন ঘুম ভেঙেই গেছে তখন তোমরা ঘুমোও কোন অধিকারে? উনি তো সুযোগ সুবিধে মতই একটু গড়িয়ে নেন, আমি হয়তো সপ্তাহান্তের পার্টি প্রেসার সামলে, ধেই ধেই করে নেচে, ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির বাপ বাপান্ত করে, সোনালি তরলের ঘুমঘোর মোহে দেশের দুঃখদুর্দশার কথা বন্ধু সহযোগে তর্কাতর্কি করে, ফেসবুকীয় বিপ্লব সেরে রাত্রি দ্বিপ্রহরে বডি বিছানাতে ফেলেছি। তাই শরীরের বিশ্রামের প্রয়োজনেই এবং মনের বিশ্রামের অধিকারেই ঘুমোই। কিন্তু এ যুক্তি তার কাছে প্লেস করার সুযোগ নেই কারণ যে দু তিনটে ভাষায় আমার সামান্য দখল আছে, আমাদের বাড়ির নবীনতম সদস্য এখনো সেই ভাষায় বাক্যালাপ করতে বিশেষ উৎসাহ প্রদর্শন করে নি। তাঁর স্টাইল পুরোপুরি একনায়কতান্ত্রিক। নিজের সুবিধা-অসুবিধা প্রয়োজন-অপ্রয়োজন উঁচুস্বরে নির্দ্বিধায় অন্যের সময়-অসময়ের তোয়াক্কা না করেই তিনি জানান দেন। হিটলার মুসোলিনিও লজ্জা পাবে সেই অথরিটেটিভ স্টাইল দেখে। ধরুন আপনি সকালবেলার প্রথম পটি – না না সকাল সকাল বাজে কথা নাই বা বললাম – ধরুন সকালবেলার প্রথম চা-টা হাতে নিয়ে সোফায় “রাতভর ঘুমোনো ক্লান্ত শরীরটা” একটু এলিয়ে দিয়েছেন এমন সময় বাজ পড়ার মত বাজখাঁই গলায় চিৎকার। আপনি ভাবছেন এই তো সবে ডাইপার চেঞ্জ করে দুধ খাইয়ে সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিলাম। কথা হচ্ছে সে প্রয়োজন ছিল শরীরের। এখন তার আত্মার প্রয়োজন আর সেটা হল বাবার কোলে উঠে একটু মর্নিং ওয়াক করা। পিতাপুত্রীর সুসম্পর্ক সাধনের সদিচ্ছা নিয়েই সে সাশ্রু নয়নে জানাবে এই দাবী। কোলে তুলে নিলেই যে দু পাটি দাঁত বের করে এমন নিখাদ স্মাইলটি দেবে দেখেই মনে হবে আগের কান্নাটা ছিল কুমীরকান্না। দু পাটি দাঁত বের কথাটা একটু অত্যুক্তি হয়ে গেল কারণ দু চার খানা দাঁতেরই শুভাগমন হয়েছে সে মুখে। 

যাকগে যাক, কথা হচ্ছিল লাথি ঝাঁটা খাওয়ার। তা হ্যাঁ, লাথিটা নিয়ম করেই খাচ্ছি। তিন বছর আগে খেতাম বড় মেয়ের কাছে। কিন্তু সে এখন রেগে গেলে রাম চিমটি, লক্ষ্মণ কিল ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে (ওর মায়ের কাছে হেভি ঝাড় খাওয়ার সম্ভাবনাটা কনসিডার করে নিজের পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে)। কিন্তু ছোট মেয়ের সে আপদ নেই। এই এক বছর ধরে হোম স্কুলিং-এ বাংলা ভাষা শিক্ষা করে নিশ্চয়ই  ভাষাটাকে তার খুব ফানি ল্যাঙ্গুয়েজ লেগে থাকবে নয়তো তার মা তার ওপরে গলা চড়ালেই দু পাটি না-হওয়া দাঁত বের করে ফ্যাকফ্যাক করে হাসবে কেন? বকাঝকা ভীতির উদ্রেক না করলে বকার উৎসাহ, উদ্যম দুটোই চলে যায়। তো যা বলছিলাম, তিনি বকাঝকার তোয়াক্কা না করেই লাগাতার লাথি মেরে ছটার মধ্যে আমার ঘুমের দফারফা করে দিয়ে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকেন। খিদের মুখে যেমন পৃথিবী গদ্যময়, ঘুমের মুখে তেমনি পৃথিবী রাত্রিময়। থুড়ি ঘুমের চোখে পৃথিবী শত্র‌ুময়। আর সেই শত্র‌ুই যখন ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে মনজয় করার চেষ্টা করে তখন মনে গৌতমবুদ্ধসুলভ সদ্ভাবনার উদ্ভব হয় না এ কথা অকপটে স্বীকার করাই যায়। তবুও ভদ্রতার খাতিরে মুখে দেঁতো হাসি লাগিয়ে পুতুল সাইজের প্রাণীটাকে জড়িয়ে ধরে সেকেন্ড রাউন্ড ঘুমোনোর চেষ্টা করি। প্রাণপণ। 

লিপ্সা

[প্রকাশিতঃ পরবাস ৭৬ সংখ্যা https://www.parabaas.com/PB76/LEKHA/kSwarvanu76.shtml ]

কোনো কোনো শীতের রাতে শঙ্খচূড় সাপ হয়ে যাই
খোলসের আড়ালে পিচ্ছিল
বিষের আচ্ছাদনে নীল

শরীরময় ঘুরে বেড়ায় জলজ কাঁকড়ারা
যেন গাজনের মেলা
চোখে লেগে থাকে ইন্দ্রজাল
চেরা জিভে স্বাদ থাকে না, শুধু অন্ধ স্পর্শসুখ
আর থাকে গভীর অসুখ
সুখের ভারেতে আনত, বিড়ম্বিত, মূক

তারপর সারারাত বৃষ্টি হয় অঝোরে
ভিজি বসে অন্ধকারে ঝাপসা একেলা…

জীবন তো কতগুলো মেঘেদের খেলা।

যযাতির বাড়ি বদল – রম্যরচনা

যযাতি কিন্তু পুরো দস্তুর বাঙ্গালি। তাই প্রথমেই মাথায় হনুমান টুপিটা পরে নিয়েছে। মাঙ্কি ক্যাপ হচ্ছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। শীত পড়ুক না পড়ুক, ফুল ফুটুক না ফুটুক, বসন্ত আসুক না আসুক, হাওয়ায় হাল্কা শিরশিরানি আসলেই বাঙালি মাঙ্কি ক্যাপটা চড়িয়ে নেবে। তো যযাতিও সেই মত মাথায় হনুমান টুপি, হাতে দস্তানা পড়ে, গায়ে আলোয়ান জড়িয়ে রেডি। কারণ যযাতি বাড়ি বদলাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই বাড়ি খুঁজছিলেন। শেষমেশ siteground শহরে একটা মনোমত বাড়ি পেয়েছেন। এখনও ঢেলে সাজান হয় নি বাড়ি, কিন্তু সেসব আস্তে আস্তে হবে খন। আগে ঠিকানা ছিল দশ নম্বর ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম লেন। এখন ঠিকানা হল ১১/১ siteground স্ট্রীট। তবে আপনারা যারা যযাতির সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা মারতে আসেন, যযাতির ননসেন্স সেন্স করতে আসেন তাদের জন্য সুখবর হল যযাতির ভার্চুয়াল ঠিকানা একই থাকছে। যযাতির সব যজমানদেরও নতুন ঠিকানায় ইম্পোর্ট করা হয়েছে।

এবারে একটু খোলসা করে বলি যযাতির ঝুলি wordpress.com থেকে siteground hosting service-এ সরান হয়েছে। কিন্তু domain name একই থাকছে – https://jojatirjhuli.net । আর যযাতির ঝুলির follower-দের import করা হয়েছে। সুধী পাঠকপাঠিকারা আপনারা যদি http://jojatirjhuli.wordpress.com -এ এসে যযাতির লেখা কেন পাচ্ছেন না ভেবে মাথা খুঁড়ছেন, দয়া করে https://jojatirjhuli.net address-এ আসুন। যযাতির ভাট বকা প্রাণ ভরে উপভোগ করুন। যযাতির ঝুলির wordpress follower-রা wordpress account-এ ঢুকলে নতুন পোস্টের খবর পাবেন। অবশ্য আপনি যদি যযাতির ঝুলির পোস্টের ই-মেল নোটিফিকেশান পেতে অভ্যস্ত, তাহলে যতদূর সম্ভব আপনাকে এই নতুন wordpress account-এ আবার করে follow করতে হবে। যযাতির এই নতুন বাড়ি ঢেলে সাজানো হবে শিগগিরি। Social networking site-এর সাথে integration আরও মজবুত করা হবে। আপনার browsing-এর সুবিধের জন্য sticky menu ইত্যাদি দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে যযাতির এই নতুন অবতার আরও বেশি মনোগ্রাহী হবে। তাই যযাতির সঙ্গে থাকুন। যযাতির লেখাতে মন্তব্য রাখুন। যযাতির লেখা শেয়ায়র করুন। যযাতির ঝুলিকে এত জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

সেল্ফি স্বরূপ

selfie

স্ব-বাবু মহারাজ যযাতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজ এই যে দিন-রাত অনবরত সকলের মুখে একটাই শব্দ শুনতে পাচ্ছি। “সেল্ফি”। এটি কি রূপ? এটি খায় না অঙ্গে মর্দন করে?”

মহারাজ যযাতি বললেন –

উত্তম প্রশ্ন বৎস। খুবই রুচিকর আর আকর্ষণীয় এই বস্তু। ইহার পেছনে ইতিহাসও অতি মনোরঞ্জক। ধরাধামে কলিকালে এক ধরনের প্রাণির উদ্ভব হয়েছে যারা নিজেদের মানুষ বলে দাবি করে। আকৃতিগত ভাবে মানুষদের সাথে সাদৃশ্য থাকলেও বাকি সকলই ভীষণরকম বিসদৃশ। আসল মানুষ যেখানে ফুল, পাখি, গাছ, পাহাড়, নদী দেখতে ভালবাসত এই মনুষ্য-সদৃশ জীব শুধু নিজেদেরই দেখতে ভালোবাসে। আমার অনুমান এরা বেদান্তের “আত্মানং বিদ্ধি” অর্থাৎ “নিজেকে জানো” এই মহান শ্লোকটির অনুসারি। তাই এরা নিজেকে জানার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন কোণ থেকে, বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে দেখতে উৎসাহী। এই নতুন প্রজাতির মানুষকে উত্তরমানব বা প্রায়-মানব বলা হয়। নিজেকে জানার এই ইচ্ছা এদের মধ্যে ক্রমে ক্রমে প্রবল থেকে প্রবলতর এবং অনধিক্রম্য হয়। প্রথম প্রথম এরা নিজেকে দেখার সাধ পুর্ণ করতে চিত্রকরকে দিয়ে নিজেদের চিত্রিত করাতো। অর্থাৎ নিজের ছবি আঁকাত। কিন্তু সে অতি সময় সাপেক্ষ ও ব্যায়-বহুল বলে বেশিরভাগ প্রায়-মানবকেই আয়ানায় নিজের মুখ দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হত। পরে এরা এদের উর্বর মস্তিষ্ক খাটিয়ে এক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলে যার নাম “চিত্র বন্দি যন্ত্র”। অর্থাৎ এটা এক ধরণের ছবি ধরার ফাঁদ। এই অত্যাশ্চর্য যন্ত্রের সাহায্যে যে কোন দৃশ্যকে ফাঁদে ফেলে বাক্স-বন্দি করা যায়। কোন কিছুর দিকে এই যন্ত্র তাক করে একটি বোতাম টিপলেই ব্যাস। সুড় সুড় করে সে দৃশ্য এসে বাক্সের মধ্যে ঢুকে যাবে, সাথে সাথে বাক্সের দরজা বন্ধ আর ছবি বাক্স-বন্দি। সে ছবি তখন বাক্সের মধ্যে যতই ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করুক না কেন, বাক্স থেকে বেরোনর কোন পথ নেই।

কোন কিছুর দিকে এই যন্ত্র তাক করে একটি বোতাম টিপলেই ব্যাস। সুড় সুড় করে সে দৃশ্য এসে বাক্সের মধ্যে ঢুকে যাবে, সাথে সাথে বাক্সের দরজা বন্ধ আর ছবি বাক্স-বন্দি। সে ছবি তখন বাক্সের মধ্যে যতই ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করুক না কেন, বাক্স থেকে বেরোনর কোন পথ নেই।

কিন্তু প্রথম প্রথম সে যন্ত্র আয়তনে বৃহৎ হওয়ায় নিজের দিকে তাক করে বোতাম টেপার সুবিধে হত না। তখন সাগরে, পাহাড়ে জাদুঘরে, বাজারে সর্বত্র যেকোন চেনা-অচেনা-অর্ধচেনা লোক দেখলেই এই প্রায়-মানবদের বলতে শোনা যেত “দাদা, আমার একটা ছবি তুলে দিন না” বলে তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই সেই ছবি বন্দি করার কলটা তার হাতে তুলে দিয়ে হাসিমুখে, ঘাড় বেঁকিয়ে বিভিন্ন নৃত্য বিভঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ত। এই ভাবেই কিছুকাল ধরে এরা নিজেকে দেখার এবং জানার তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল। কিন্তু অপরের সাহায্যের প্রয়োজন থাকায় সর্বতোভাবে নিজেকে জানতে পারছিল না অর্থাৎ যথেস্ট পরিমাণে নিজের ছবি তুলতে পারছিল না এবং তদহেতু অবসাদে ভুগছিল। ক্রমে ক্রমে এই যন্ত্র ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে একটি আঙ্গুর ফলের মত ছোট হল। এবং প্রায়-মানবদের আর এক আবিষ্কার দুরভাস যন্ত্রের মধ্যে স্থান পেল। তখন ঐ যন্ত্র নিজের দিকে তাক করেও নিজের চিত্র বাক্স-বন্দি করা সম্ভব হল। তখন প্রায়-মানবেরা সর্বপ্রকারে নিজেকে জানতে প্রয়াসী হল। সময়-অসময়, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় এরা নিজেদের পানে ঐ যন্ত্র তাক করে নিজেদের ছবি তুলতে লাগল। ইহাই “সেল্ফি”। অন্যের সাহায্য ব্যাতিরেকে নিজের স্বরুপ উদঘাটন করতে পেরে ইহাদের আনন্দের অবধি থাকল না। তখন মন্ত্রিমশাই থেকে মুচি-কসাই, টাটা-বিড়লা থেকে গরিব চা-ওয়ালা, রাজনীতিকার থেকে চোর পকেটমার, রাজা-গজা থেকে ভুমিহার প্রজা, কেস্ট-বিস্টু থেকে পটল, কেয়া, মিস্টু সকলেই ঘুমনোর সময়টুকু ছাড়া সর্বক্ষন সেল্ফি তুলতে থাকল।

তখন মন্ত্রিমশাই থেকে মুচি-কসাই, টাটা-বিড়লা থেকে গরিব চা-ওয়ালা, রাজনীতিকার থেকে চোর পকেটমার, রাজা-গজা থেকে ভুমিহার প্রজা, কেস্ট-বিস্টু থেকে পটল, কেয়া, মিস্টু সকলেই ঘুমনোর সময়টুকু ছাড়া সর্বক্ষন সেল্ফি তুলতে থাকল।

এমনকি কিছু কিছু প্রায়-অতিমানব গতিমান ট্রেন-এর সামনে বা উঁচু ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে সেল্ফি দ্বারা নিজেকে জানার প্রয়াস করে হাসি মুখে প্রাণ বিসর্জন দিতেও পিছপা হল না। শুধু তাই নয়, ইহারা এই পর্বত প্রমাণ সেল্ফি বা নিজস্বি সকলকে ইহাদের আর একটি আবিষ্কার আন্তর্জালের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে মর্তলোকের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে একই সাথে এরা সকল ভুভাগে দৃশ্যমান হল। এবং এক ধরনের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সবাই একে অপরকে অপূর্ব সুন্দর কিম্বা সুন্দরী বলে বাহবা দিয়ে নিজেদের আত্মগরিমা পুনঃ পুনঃ উজ্জীবিত করতে থাকল। তখন প্রায়-মানবেরা স্বোহম অর্থাৎ “আমিই সেই ব্রহ্ম” সেই পরম বোধে উত্তীর্ণ হয়ে আত্মজ্ঞানী হল। সচ্চিদানন্দের কৃপায় সৎ অর্থাৎ নিজের অস্তিত্বকে জানান দিতে নিজের চিৎশক্তি অর্থাৎ ইচ্ছাশক্তির সহায়তায় সেল্ফি আবিষ্কার করে এই প্রায়-মানবেরা আনন্দ লাভ করল এবং অনন্ত-আনন্দ-কারণ-সাগরে নিমজ্জিত হল।