হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে

পৃথিবীর আদিমতম সত্য নারী পুরুষের ভালবাসা। পুরুষ কি চায় সে কন্দর্পদেবও জানেন কিনা জানি না, নারী চায় ভালবাসার সরব উদযাপন। ব্যতীক্রমী নারী থাকবেই কিন্তু ব্যতিক্রমই নিয়মকে প্রমাণ করে। আর সেই প্রেমের উদযাপন করতেই আসে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। তাই একটা কার্ড, একটা নরম টেডি, আর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ইলু ইলু। ইলু কা মতলব আই লাভ ইউ। প্রাণের ঠাকুরের পুজোর উপকরণ যেমন গাঁদা,জবা প্রেমের ঠাকুরের পুজোর উপকরণ গোলাপ। তাই ফেব্রুয়ারী চতুর্দশী তিথিতে বাড়ি আসার সময় দেখি রাশি রাশি গোলাপ ফুটেছে ট্রেন জুড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে, “এই যা। ভুলেছি।” অতএব সেই মানুষটাকে টেক্সট করে বলে দাও হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে। যা থাকে কপালে। প্রাচিত্তির এই প্রকার।

কিন্তু প্রেম পুজোর গোলাপের কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে আমাজন ওয়েব সার্ভিস। কেন? একটু খোলসা করি। আমাজনের অরণ্যে বিক্রিবাটা হয়। কিন্তু বিক্রিবাটার প্রধান সময় থ্যাঙ্কস গিভিং সপ্তাহান্ত। সেই সময় তার অনেক সার্ভার লাগে। বাকি সময় সেই সার্ভারগুলো করে কি? অতএব সেগুলোকে তারা ভাড়ায় দেয় অন্যকে। এই থেকেই তৈরী আমাজন ওয়েব সার্ভিস। পাড়ার ডেকরেটর যেমন প্যান্ডেল করতে ভাড়া দেয় বাঁশ, কাপড়, আমাজন ভাড়া দেয় হার্ডওয়ার। সে যাকগে। গোলাপের কথা হচ্ছিল। প্রেমপুজোর দিনে গোলাপের খুব চাহিদা আমাজনের থ্যাঙ্কস গিভিং উইকএন্ডের মত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গোলাপ গাছের ভ্যালেন্টাইন নেই। তাই নির্দিষ্ট দিনে তার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে না। তাই ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের ভজকট রুল মেনে বাড়ে গোলাপের দাম। দাম বাড়তে বাড়তে আকাশ ছোঁয়। আকাশে তখন “সুরজ হুয়া মধ্যম”। প্রেমিকার হাতে চুড়ি গলিয়ে দিয়ে গলির শাহরুখ খান বলে ওঠে “কুছ রিস্তে জিসকা কোই নাম নেহি হোতা, সিরফ অ্যাহেসাস হোতা। চুক তো নেহি রাহা”। বাতাস আদর পেয়ে বাঁদর। গলির কাজলের দু এক গোছা অবাধ্য চুল এসে পড়ে কপালে। বাতাসের বাঁদরামিতে।

গলির কাজলের কাজলচোখের গহনে বিকেল হারায়। সন্ধে নামে। চাঁদ তখন বাড়াবাড়ি রকমের নির্লজ্জ হয়ে ওঠে। গলে গলে নামে পৃথিবীর শহরঅরণ্যে জ্যোৎস্না হয়ে। তারপর গলির শাহ্রুখ আর কাজল কি কাণ্ড করে তা আমি দেখি না। চোখ মুদে থাকি। সে গোপন কম্ম ব্রহ্মা জানেন। আমি শুধু জানি, ভালবাসায় ঊষর মঙ্গল গ্রহও সবুজ হয়ে উঠবে একদিন। আমি শুধু বিশ্বাস করতে চাই, এ শহরে ভালবাসায় হেরে যে ছেলেটা আজ অ্যাসিড নিক্ষেপকারী, তার হৃদয়েও গোলাপ ফুটবে একদিন। জানি এ আমার অক্ষম কবিমনের কষ্টকল্পনা। তবু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। আর যে মেয়েটা পোড়া চামড়া নিয়েও করছে জীবন উদযাপন, বিশ্বাস করেছে তার জন্যও আছে এ পৃথিবীর জল, নদী, ফুল, পাখি, আকাশ, তাকে বলি,

হে অগ্নিবর্ণা, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে।

Leave a Reply