মাঝে মাঝে সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে থাকে খেলার মরসুম। বাইরে তখন শীতঘুম। সাদা কাপড়ে মোড়া শীতবুড়ি। চালিয়ে দিয়েছে ছোরা, ঋণাত্মক কুড়ি।
শুনেছি প্রাণী মধ্যে mammals বা স্তন্যপায়ীরা সবচেয়ে কৌতুকপূর্ণ বা playful । এ কথা একদমই নয় ভুল। কিন্তু থাক সেসব ইকড়িমিকড়ি। জীববিদ্যা ফেলে চলুন আমরা গল্পে ফিরি।
বাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্যা চোখে আলো জ্বেলে বলে ওঠে, বাবা কি খেলবে? হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু প্লে। বাট আই রিয়েলি ডোন্ট হ্যাভ এ সে। আমায় ভাবার সুযোগ না দিয়েই বলে, হাইড অ্যান্ড সীক। আমি চোখের তারায় জোনাকি জ্বেলে বলি, ঠিক ঠিক। তাথৈ বলে, ওকে বাবা, ইউ কাউন্ট। আমি দেওয়ালের দিকে ফিরে হাত চোখে করি মাউন্ট। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে গুনতে থাকি, এক দুই তিন চার… তর সয় না তার। “বাবা আমি হাইড করেছি”। ব্যাস আমিও চোখ খুলে ফেলেছি। আর কাউন্ট করে কি কাজ, থাক। তাথৈ সোনাকে খোঁজা যাক। তা লুকিয়েছে সে, যেখানে কাউন্ট করছি সেখান থেকেই ফুট চারেক দূরে, সোফার আড়ালে। সেখান থেকে তার আওয়াজ আসছে যেমন করে আওয়াজ আসে কলে ইঁদুর পড়লে। উত্তেজনায় তার ছোটো শরীর থরো থরো। কিন্তু অমনি খুঁজে বের করলে কি ভাল দেখায় বড়ো? তাই বাবা এদিক যায়, ওদিক যায়। “তাথৈ তুমি কোথায়? আই অ্যাম কাআআমিং। তোমায় খুঁজে বের করা খুব শক্ত হচ্ছে ইদানীং”। এই সব বলি। সময় কিছু নষ্ট করে পৌঁছই সোফার কানাগলি। তাথৈ বলে ধাপ্পাআআ, আওয়াজ শোনা যায় রামতলা থেকে রাজারাপ্পা। অমনি আমিও করি, চমকে ওঠার ভানটি। সে সরলা তাই দেখে হেসেই কুটিপাটি।
এবার তার কাউন্ট করার পালা। কিন্তু একটাই ঝামেলা। আমার লুকোনোর স্পটটা সেই ঠিক করে দেয়…খুঁজে পেতে যাতে তার না হয় কষ্ট। তাথৈ এই সব ব্যাপারে খুব স্পষ্ট। “বাবা এইখানে বোসো, পা মোড়ো।” “আ মোলো। তুই যেখানে ঢুকতে পারিস সেখানে কি আমি ঢুকতে পারি, ছাই।” কিন্তু তর্ক করা বৃথাই। তার খেলার ভুবনে বাকবিতণ্ডার স্থান নাই। যাক বাবা, ঝামেলায় কাজ নাই। বেশি গোলমাল করলে তাথৈ বাজাবে সানাই। জুড়ে দেবে কান্না। বাবা তা চান না। কোনোভাবে বডিফ্রেম সেইখানে গুঁজে রাখি। নট-সো-টোনড মধ্যপ্রদেশ অর্থাৎ ভুঁড়িটিকে বলি, জাঁহাপন, মাফ করো গুস্তাখী। এই তো শুধু কাউন্ট টু টেন। তারপরই স্বাধীন হবেন। তাথৈ কাউন্ট শুরু করে। ওয়ান…টু…থ্রী…ফোর…ফাইভ…সিক্স…এইট। আমি বলি, “সেভেন সেভেন, তাথৈ সিক্সের পর সেভেন”। মাফ করবেন। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙেন, তেমনি বাবা কিম্বা মা হাইড অ্যান্ড সীকের মাঝেও শেখান, ওয়ান টু টেন। তাথৈ আবার গোনে, প্রথম থেকে, ওয়ান টু টেন। পুরো এক থেকে দশ। আমার পেট বলে, এবার ছেড়ে দে বস। তারপর তিনি আমায় খুঁজে পেতে আসেন যেখানে আগেই আমায় লুক্কায়িত রেখেছেন!! কিন্তু তাতে খেলা হয় না মাটি। ধাপ্পা দিলেই তাথৈ আবার হেসেই কুটিপাটি।
এই খেলাই রিপিট হতে থাকে দশবার বিশবার। প্রতিবারই তার কাছে একইরকম মজাদার। পুনরাবৃত্তি বোর করে আপনাকে আমাকে। কিন্তু হারায় নি সে চিন্তাস্রোতে জীবন পথের বাঁকে। সে যাই হোক, বাবা অর্থাৎ আমিও প্রতিবার মজা পাওয়ার অ্যাক্টো করি। ছোটো মানুষটাকে খিলখিলিয়ে হাসতে দেখে বুকের মধ্যে কুলু কুলু ধানসিঁড়ি।
জীববিদ্যা বলেছে কিনা, স্তন্যপায়ীরা হল গিয়ে ক্রীড়ামোদী! এইভাবেই রুনু ঝুনু বয়ে চলে জীবননদী। এইভাবেই দৈনন্দিন একঘেঁয়েমি হয়ে ওঠে যাদুবাস্তব, নিরবধি।