ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে পড়তে গিয়ে জানলাম যে যারা ডিপ্রেসড ইন্ডিভিজুয়াল বা নৈরাশ্যবাদী, সেরকম টিন এজাররা স্বাভাবিক কারণেই এই নীল তিমির খপ্পরে সবচেয়ে সহজে পড়ছে। গেমের আবিষ্কারকদের জীবন দর্শন হল এই যে এইসব নিরাশাবাদীরা এমনিই পৃথিবীর কোন কাজে আসে না। তো এদের শুরুতেই খরচা করে দিলে পৃথিবীর এবং মানুষ জাতির আখেরে লাভ। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত যুক্তিহীন মত কিন্তু পড়তে পড়তে হঠাত মনে হল এই মানুষ জাতির ইতিহাসে এই গেম বের হওয়ার অনেক আগে থেকেই, সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই এইরককম একটা প্রকাণ্ড নীল তিমি তার অদৃশ্য হাঁ নিয়ে ঠায় বসে আছে। যতক্ষণ তোমার এই সমাজকে, এই পৃথিবীকে কিছু দেওয়ার আছে, ততক্ষণই ওই আগ্রাসী হাঁ থেকে তোমার নিস্তার। যেদিন তোমার দেওয়া শেষ সেই দিনই ওই নীল তিমির প্রকাণ্ড জঠর গহ্বরের পথে তোমার মহাপ্রস্থান। এই সর্বগ্রাসী নীল তিমিই রোজ আমাদের প্রেরণা দেয়, রোজ আমাদের তাড়না দেয় নতুন কিছু করার। নিজেকে নতুন করে চেনার। সিন্দাবাদের মত জাহাজে করে নিজেরই মনের সাগরের বন্দরে, বন্দরে, কুলে, উপকূলে ঘুরে মনি, মুক্তো, রত্ন সংগ্রহ করে এনে এই সংসারকে শুল্ক স্বরূপ সবটুকু দিতে হবে। যেদিনই তোমার জাহাজের পাল ছিঁড়বে কি হাল ভাঙবে বা গতি হবে রুদ্ধ সেই মুহুর্তেই সেই নীল তিমির বিশাল হাঁয়ের মধ্যে তলিয়ে যাবে তুমি তোমার বিকল জাহাজ সমেত। সমাজরূপী সেই নিষ্ঠুর ট্রেজারার গুনে গেঁথে মেপে রেখে দেবে তোমার সবটুকু সঞ্চয়। “সোনার তরী” কবিতায় এমনটাই বলতে চেয়েছেন কবিবর। তবু আজ এই ব্লু হোয়েল গেম আমায় এক নতুন আঙ্গিকে চেনাল এই অদৃশ্য অথচ সর্বগ্রাসী নীল তিমিটিকে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ভার্চুয়াল নীল তিমিটাকে তো মারার সর্বতো প্রকার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু ওই চিরন্তন নীল তিমিটার নিরন্তর ভয় যেটা আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়, ফসল ফলিয়ে বেড়ায় সেটার বেঁচে থাকা বোধ হয় খুব জরুরী। ওই নীল তিমিটার আগ্রাসন থেকে বাঁচতেই তো আবিষ্কার আগুন, চাকা, ষ্টীম ইঞ্জিন, মাধ্যাকর্ষণ, আপেক্ষিকতাবাদ। পশু থেকে মানুষকে মানুষ করেছে এই নীল তিমি। একদিন এই নীল তিমিই হিংসা, ঘৃণা, কলুষ আর যত মিথ্যা জৌলুস কেড়ে নিয়ে মানুষকে দেবতা বানাবে। মানুষ ঈশ্বর হওয়ার আগে বোধ হয় ওই নীল তিমিটার হাঁ থেকে নিস্তার নেই।
