পাঁচ হাজারি – রম্যরচনা

“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” – কবিবর নেহাতই সেকেলে মানুষ ছিলেন বলে এরকম একটা হাবিজাবি মনগড়া কথা লিখে গেছেন। কথাটা আসলে হবে “যদি তোর ঢাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা পেটাও রে”! একলা ঢাক একটু আধটু পেটাতেই হয় আজকাল। আপনি যদি চাচা চৌধুরীর বুদ্ধি, রাকার বাহুবল, জেমস বন্ডের আগ্নেয়াস্ত্র আর ফেলুদার মগজাস্ত্র নিয়েও জন্ম নিয়ে থাকেন বা “জন্মগ্রহণ” করে থাকেন আর সেই গুমোর নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন আর ভাবেন কেউ এসে আমার ঢাকটা বাজিয়ে দেবে, তাহলে অতি অবশ্যই কিছুদিনের মধ্যে আপনার কিছু বিজাতীয় কেশরাশি প্রজ্বলিত হওয়ার কটুগন্ধ টের পাবেন যখন দেখবেন ঢক্কানিনাদ তো দূরের কথা শুদ্ধ নিষাদ-এও আপনার সুরটি বাজছে না। অন্যের ঢাকে কাঠি দেওয়ার থেকে তার পেছনে কাঠি দেওয়ার পরিতৃপ্তি ও পরিব্যাপ্তি অনেক বেশি। তাই নিজের গুণমুগ্ধ ভক্ত হন আর নিজের ঢাকেই কাঠি করুন। সজোরে করুন যাতে বহুদূর অব্দি ঢাকের বাদ্যি শোনা যায়। আসলে নিজের ঢাক নিজে পেটানোর মধ্যে অহংকার নয় একটা প্রচ্ছন্ন বিনয় থাকে কারণ ঢাকের বাজনা যে কথাটা তালে ছন্দে বলে যায় সেটা হল “আমার ঢাক পেটানোর জন্য অন্য কেউ নেই”। অন্যেরা আপনার ঢাক পেটানো আরম্ভ করলেই আপনি ঢাকের কাঠি সযত্নে নামিয়ে রেখে নির্ঘাত বিনয়ের অবতার হয়ে যাবেন – এই না না, আমি কি আর তেমন করেছি? সাথে যোগ করে দেবেন সেই ফেমাস ডায়ালগটি। সমুদ্রের ধারে বসে নুড়ি কুড়িয়েছি মাত্র।

As soon as, লোকে আমার ঢাকে কাঠি করা শুরু করে, আমিও বিনয়ভারে অবনত হয়ে যাব ঠিক করেছি। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে অন্যেরা আমার ঢাকে কাঠি করছেন না। তাই আপাতত নিজের ঢাক নিজেই পেটাই। বছর দুয়েক আগে ওয়েব দুনিয়ায় যযাতির ঝুলি বলে একটি বীজবপন করেছিলাম। মাঝে মাঝে জল দিই। একটু সার, কীটনাশক দিই। আজ দেখছি গাছটা বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ফেসবুক প্রাঙ্গনে দেখি তার পাঁচ হাজার লাইক। চেনা মানুষেরা খুব একটা সাথ দেবে না সেটা জানতাম। কিন্তু অচেনারা যে এমন করে সাথী হবে সেটা জানতাম না। তাই যাঁরা যযাতির ঝুলি পড়েন এবং পড়ান তাঁদের সশ্রদ্ধ প্রণাম। আরও অনেক গল্প, কবিতা, রম্যরচনা নিয়ে যযাতি বুড়ো হাজির হবে আপনাদের কাছে। ভাল লাগলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন। শেয়ার করবেন নিজের টাইমলাইনে। আর পারলে নিজের বন্ধুদের যযাতির ঝুলি লাইক করার সৎ পরামর্শ দেবেন :-)। যাঁরা যযাতির ঝুলিতে সবে সবে যোগ দিয়েছেন, ফিরে গিয়ে পুরনো লেখাও পড়তে পারেন। খারাপ লাগবে না – এটা যযাতির নিশ্চয়তা। আপনাদের সহায়তায় যযাতির ঝুলির বৃত্ত বৃহত্তর হোক মহত্তমের কাছে এই প্রার্থনা করি।

Leave a Reply