অন্তর্জলি যাত্রা – রম্যরচনা

Thirty four friends started their journey. Only one of them returned….

আলোর জগৎ থেকে অতি দ্রুত নেমে এসেছি এই অতলান্ত অন্ধকারে। এখানে সময় গতিহীন। এখানে সব ঘড়িদের ছুটি। শব্দের জগৎ থেকে এ জায়াগাটা শুধু একটুখানি দূর। তবু এখানে হাজার হাজার বছর ধরে জমে আছে নৈঃশব্দ। জমে আছে ভাষাহীন ভাষা। মুম্বাইয়ের এক ব্যস্ত সকালে ছুটির ঘন্টা বেজে উঠেছিলো আমার দু কামরার বরিভেলির ফ্ল্যাটে। দেবেন্দ্রদার আন্ধেরীর অ্যাপার্টমেন্টে, লোকেশের ঘাটকোপড়ের বাড়িতেও সকাল সকাল একই ব্যস্ততা। প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যে, সহ্যাদ্রি ঘাটের মৌনতায় বন্ধু, সহকর্মীদের সাথে হাসি, গল্প, ঠাট্টায় কয়েকটা দিন। তারপর আবার সেই দৈনন্দিন মুখরতায় ফিরে আসা। কাকভোরে উঠে চটজলদি দাঁত মাজা, দু ঘটি জল ঢেলে নেওয়া। তারপরে জামাজুতো পরতে পরতে হোয়াটসআপ মেসেজ চেক করে নেওয়া। আসন্ন দিন তিনেকের এক্সকারশান নিয়ে আবশ্যক অনাবশ্যক টুকিটাকি কথা। একটু পরেই বাসে চেপে চৌত্রিশজন সহকর্মী পাড়ি দেবে মহাবালেশ্বর। ঘর থেকে বেরোনোর সময় আমার তিন বছরের মেয়েটা ঘুম চোখে “বাবা বাই বাই সী উ”, কচি হাতের একটা ফ্লায়িং কিস। বাসে ওঠার আগে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে সক্কলে মিলে একটা গ্রুপ পিকচার। বাসে উঠে জানলার ধারের সীট নেওয়ার জন্য হুটোপাটি। মহাবালেশ্বরের পথে বাস চালু হওয়া মাত্র সকলে সমস্বরে “গণপতি বাপ্পা মোরিয়া”। চলতে থাকা বাসে অনেকগুলো হাসি মুখ। খুচরো ইয়ার্কি, লেগ পুলিং। জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে প্রকৃতির অতুল ঐশ্বর্য দেখতে থাকা অনেকগুলো মুগ্ধ চোখ। বৃস্টি ভেজা পশ্চিমঘাটের অনবদ্য দৃষ্টিনন্দন শ্যামলিমা। শ্যাওলা সবুজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বর্ষার জলে পুষ্ট হঠাৎ-চঞ্চলা ঝর্ণা। মোবাইলের ক্যামেরাতে আলোছায়ায় ধরে রাখা টুকরো স্মৃতিরা। হঠাৎই…হঠাৎই এসব কিছুর প্রয়োজন ফুরোল। সময় এল রাজার মত। হাত ধরে নিয়ে এল শব্দ থেকে নৈশব্দের এই অদ্ভুত জগতে। শুধু কিছু কথা বাকি রয়ে গেল। কিছু ইচ্ছে। বাড়িতে এখনো অপেক্ষারতা সেই খুদে বন্ধুটির সাথে আর একবার অফিস থেকে ফিরে ডাক্তার-রুগি খেলা হল না। তার কচি আঙুলগুলো নিজের আঙুলের মধ্যে ধরে আর একবার উপভোগ করা হল না সন্তান স্পর্শসুখ। ছুটির দুপুরে আমার জীবনসহচরীটির স্নানান্তে সুগন্ধি চুলের ঘ্রাণ আর একবার নেওয়া হল না।

এখানে শুধু নিশ্ছিদ্র মৌনতা। নিরন্তর শান্তি। অখণ্ড নিস্তব্ধতা। সেই খুদে প্রাণিটি হয়তো একরাশ উৎসাহ নিয়ে তার মাকে জিগেস করবে “বাবা কবে ফিরবে মা?” ওর মা চোখ মুছবে ওড়নার খুঁট দিয়ে। দুদিন, পাঁচদিন দশ দিন জিজ্ঞাসা করতে করতে আমার কন্যার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কটিও বুঝে যাবে – না। বাবা আর কোনোদিনও ফিরবে না। কিছুটা সময় লাগবে। এই নিষ্ঠুর সত্যটা ওর বুঝে নিতে কিছুটা সময় লাগবে, আর ওর মায়ের…মেনে নিতে।

 

https://timesofindia.indiatimes.com/city/pune/at-least-10-killed-as-bus-plunges-200-feet-deep-into-gorge-in-raigad/articleshow/65175833.cms

Leave a Reply