তাথৈ বলল “দাও”। শুনেই আমার থরহরি কম্পমান হল। আসলে পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় কথা আছে। আমার তাই অবস্থা। এর আগে যতবার দাও শুনেছি ততবারই ভারি গোল বেঁধেছে। এবারেও বাঁধবে সন্দেহ নেই। কারণ মনুষ্যেতর প্রাণীরা দাও বলে না আর মানুষেরা দাও বললে কি দিতে হবে সেটাও সাথে বলে দেয়। তাথৈ নাম্নী প্রাণী তার ধার ধারে না। দাও বলেই সে যথেষ্ট পরিমাণে আত্মবিশ্বাসী থাকে যে সে মনের ভাব পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রকাশ করতে পেরেছে। এবং সে যেটা চাইছে সেটা তাকে কেন দেওয়া হচ্ছে না এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ (এবং এটা আমার অনুমান) ও যেটা চায় সেটার ছবিটা ওর মনে স্পষ্ট কিন্তু তার শব্দরূপ জানে না।
শুধু দুটি জিনিস চাওয়ার ক্ষেত্রে ও বিশেষ্য (নাকি বিধেয়) টা ঠিকঠাক বসাতে পারে। সেটা হল, হ্যাঁ আপনার অনুমান সত্যি। প্রথমটা চকলেট। আর একটা আছে অবিশ্যি সেটা হল জল। দ্বিতীয়টি প্রাণদায়ী হলেও শুনি প্রথমটা প্রাণঘাতী। সে যাই হোক, এই দুটি ছাড়া অন্য কিছু চাওয়ার থাকলে শুধু দাও বলেই ক্ষান্ত হয়। এবার বোঝ ঠেলা। কি দিতে হবে সে ব্যাপারে তোমার অনুমান শক্তিই তোমার একমাত্র গাইড। নিউটনের সূত্র থেকে গোমূত্র সব কিছু ট্রাই করে দেখি এক এক করে। ট্রায়াল অ্যান্ড এরর। একটা লাগবেই। তবে ভুলের মাসুল আছে। একটি করে দিই আর তাথৈ বলে “না”। পরে এই না-এর টোনাল কোয়ালিটি বদলাতে থাকে। মুদারা থেকে তারায় যায়। এবং প্রথম পাঁচ ছটা চেষ্টায় ঠিক ওর যা চাই সেইটি দিতে না পারলে হাত টাত চালাতেও সংকোচ বোধ করে না। গান্ধিগিরির শেখানোর কোন ভাল কোচিং সেন্টার থাকলে জানাবেন। ওকে ভর্তি করে দেব।
দিনের বেলা দাও বললে তাও ভাল। যদি মনে রাখতে পারো, কিছুক্ষণ আগে অব্দি ওর হাতে ঠিক কি ছিল (সম্ভবত একটা পাজলের পিস কি দের ইঞ্চি সাইজের একটা প্লাস্টিকের হাস কি ছোট কোন পাথর ইত্যাদি) সেইটি খুঁজে পেতে হাতে ধরিয়ে দিলে নিশ্চিন্তি। কিন্তু মাঝে মাঝে এই দাও এর জ্বালা হয় রাতে ঘুমের মধ্যে। রাত আড়াইটের সময় ঘুম থেকে উঠে কেউ যদি দাও বলে ভয়ঙ্কর কান্না জোড়ে, তবে প্রশান্ত বুদ্ধ মূর্তি হয়ে যে থাকা যায় না সেটা বলা বাহুল্য। বিশেষ করে এখন হাতে কিছু দিয়েই লাভ হবে না কারণ তিনি স্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছেন। সেম স্বপ্নটা না দেখতে পারলে কি করে জানব স্বপ্নে ওর হাতে কি ছিল? অগত্যা অন্ধকারে কিছু বাকবিতণ্ডার পর ওর পাছুতে চটাস শব্দ শুনতে পাই। বোধ হয় ওর মায়ের স্নেহ আশিস। তখন উচ্চৈঃস্বরে কান্না এবং পুনরায় ঘুমিয়ে পড়া। মোটের ওপর তাথৈ-এর দাও এর জ্বালায় ইদানীং অস্থির। হে দেবী সরস্বতী, হে কুচযুগশোভিতা ওকে ভাষাশিক্ষা দাও যাতে ও দাও বলার সাথে সাথে কি দিতে হবে সেটা পরিষ্কার করে জানানর ক্ষমতা অর্জন করে।