পুজোর গান

তোমার আমার দেখা হবে সন্ধ্যা হলে আলোক নদীর পারে…
কথারা সব নিভবে, উজান
আনবে বয়ে অপূর্ব গান
আমার সকল অপূর্ণতা মিশবে তোমার অসীম অন্ধকারে।।


তোমার হাতে হাতটি রেখে হাঁটব আমি অমৃত পথ ধরে…
তোমার দু চোখ অশ্রু সজল,
আমার যত পথের ফসল
সকল গিয়ে মিশবে তোমার অনন্তমূল বিশ্বপরিসরে।।


তোমার সুরে সুর মেলাবো সুমন্দ্রিত অলোক বন্দিশে…
চোখের পাতায় ঘুম জড়াবে,
সকল অহং ঠিক মেলাবে
আমার সকল কর্কশতা মধুর হবে তোমার সুরে মিশে।।


আমার খাঁচার অচিন পাখি যেদিন যাবে অনন্ত উড়ানে…
তোমার চোখে চোখটি রেখে,
সূর্যসলিল বক্ষে মেখে
মিশব জানি, মোহন, তোমার অলীক সুতোর অঙ্গ পরিধানে।।

শুভ শারদীয়া

তোমার কথা

তোমার কথা বলে বেভুল অমলতাস ফুল
নবীন আকাশ, হিরন্ময় জল
তোমার কথা বলে অনর্গল

তোমায় খোঁজে কৃষ্ণ আঁখি রাতচরা এক পাখি
হেমন্তের হিমেল হাহাকার তোমায় খোঁজে
একলা দুপুর বোঝে তোমায় বোঝে

তোমায় জানে বনমর্মর, নয়ানজুলির চর
বর্ষামুখর ঝিঁঝিঁ ডাকার রাত
জানে তোমার নীরব সংঘাত

তোমায় ছুঁয়ে থাকে কথা, মেদুর বিষণ্ণতা
ভোরের বাতাস পাথরকুচি পাতা
তোমায় ছোঁয়ার ছলেই উদ্গতা

আবার যদি ফিরে আসি

আবার যদি ফিরে আসি,
আমায় নিয়ে যাবে তোমার ভুবনডাঙার মাঠে?
যেখানে রোজ সন্ধেবেলা রিক্ত প্রহর কাটে
মগ্নতারা একলা জাগে নদীর ঘাটে ঘাটে।

আবার যদি ফিরে আসি,
তোমার খোঁপায় জড়িয়ে দেব বনধুতরোর ফুল।
বাতাস তোমার গন্ধে আকুল
প্রিয়া তোমায়, ইতস্তত ছুঁয়ে যাবে সামান্য লজ্জায়।
আমি তখন একলা শুয়ে তোমার জলে..অনন্ত শয্যায়।।

Phoolon ke Rang se…

গীতিদি এবং পার্থদা বলে এক দম্পতি আছেন যাঁরা এখানকার যেকোনো মহতী বাঙালি উদ্যোগে একজন আশ্রয়ী বটবৃক্ষের মত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। ওনাদের ৪৩ তম বিবাহবার্ষিকিতে শুভানুধ্যায়ীরা একটা প্রীতিভোজের আয়োজন করেছিলেন। সাথে একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। আমায় অনুষ্ঠান সঞ্চালকের দায়িত্ব দেওয়ায় বিভিন্ন শিল্পীরা যে গানগুলি গাইবেন শুনে দেখছিলাম। নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলাম সেই অমর কালজয়ী গানটির – “Phoolon Ke Rang Se Dil Ki Kalam Se”। এতটাই প্রেমে পড়ে গেলাম মনে হল গানটি অনুবাদ করি। কবি শ্রীজাতর কথায় অনুবাদ অনেকটা একটা শিশি থেকে অন্য শিশিতে আতর ঢালার মত। স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় কিছু সুগন্ধ উবে যাবেই যাবে। তাই প্রচেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব সুবাস ধরে রাখতে, যতটা সম্ভব ধ্বনিমাধুর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে।

তোমায় চিঠি লিখেছি রোজ ফুলের মরমে মনের কলমে প্রিয়া
কেমন করে বলি, তোমার তরেই জ্বলে আমার হৃদয় দিয়া
তোমার স্বপ্ন নিয়েই বাঁচা তোমার স্মৃতিই জাগা
তোমার কথাই ভাবছে বসে এ মন হতভাগা
তোমার আমার প্রেম যেন এক শ্রাবণ রাতের মেঘ মিঁয়া মল্লার
তোমায় ভালবাসতে প্রিয়া জন্মাবো আর বার
তোমার আমার প্রেম যেন এক শিউলি ভোরের কোমল গান্ধার
তোমায় ভালবাসতে প্রিয়া জন্মাবো আর বার
আমার হৃদয় তন্ত্রীতে আমার মনের বীণটিতে তোমার সুরই বাজে
তোমার ছবি আছে রাখা কস্তুরী সুঘ্রাণ মাখা হৃদয় দেরাজে
তোমায় খুঁজেছি জনান্তিকে তোমায় খুঁজেছি নিয়ন আলোর ভিড়ে
তোমার কথা পড়লে মনে এক লহমায় একলা নদীতীরে
তোমার আমার প্রেম যেন এক শ্রাবণ রাতের মেঘ মিঁয়া মল্লার
তোমায় ভালবাসতে প্রিয়া জন্মাবো আর বার
তোমার আমার প্রেম যেন এক শিউলি ভোরের কোমল গান্ধার
তোমায় ভালবাসতে প্রিয়া জন্মাবো আর বার

Original Song

Phoolon Ke Rang Se Dil Ki Kalam Se Tujhko Likhi Roz Paati
Kaise Bataaoon Kis Kis Tarah Se Pal Pal Mujhe Tu Sataati
Tere Hi Sapne Lekar Ke Soya Teri Hi Yaadon Mein Jaaga
Tere Khayaalon Mein Uljha Raha Yoon Jaise Ki Maala Mein Dhaaga
Haan Badal Bijli Chandan Pani Jaisa Apna Pyar
Lena Hoga Janam Humein Kayi Kayi Baar
Haan Itna Madir Itna Madhur Tera Mera Pyar
Lena Hoga Janam Hameh Kayi Kayi Baar

Sanson Ki Sargam Dhadkan Ki Beena Sapnon Ki Geetanjali Tu
Man Ki Gali Mein Mehke Jo Hardum Aisi Juhi Ki Kali Tu
Chhota Safar Ho Lamba Safar Ho Sooni Dagar Ho Ya Mela
Yaad Tu Aaye Man Ho Jaaye Bheed Ke Beech Akela
Haan Badal Bijli Chandan Pani Jaisa Apna Pyar
Lena Hoga Janam Humein Kayi Kayi Baar
Haan Itna Madir Itna Madhur Tera Mera Pyar
Lena Hoga Janam Hameh Kayi Kayi Baar

শোক ৫

দেখো আমার আনন্দধন
   উথলে পড়ে সুরার মতন
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

দেখো আমার ফান-ভান্ড
    চাখছে পিঁপড়ে একি কান্ড
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

দেখো আমার প্রেমপিরিচি
   উপচে পড়ে মিছিমিছি
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

পূর্ণ আমি ভালবাসায়
   বিক্ষত নই গোলাপ কাঁটায়
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

দেখো আমার সেলফি শহর
   অষ্টপ্রহর আনন্দঘোর
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

দেখো আমার প্রেমপ্লাবনে
   প্রাণ ভেসে যায় ক্ষণে ক্ষণে
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

দেখো আমার মোহনবাঁশি
   বাজছে সুরে দিবানিশি
      শোক তোমাকে কোথায় রাখি

শোক তুমি আজ সাত সকালে
   কেনই বা দরজায় দাঁড়ালে
      শোক তুমি যাও অন্তরালে

মৃত্যুপরিখা

হেমন্ত তুমি আজ আরও গাঢ় নীল বিষণ্নতা দাও
আরও গভীর অবসন্ন মৃত্যু
গাছেদের মৃত কোটরে কোটরে ভরে দাও আরও ঘুণপোকা

অনেক অযথা কোলাহল হল
বেঁচে থাকার অনেক মিথ্যা মহড়া হল
এখন মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ডাক এসেছে আমার
বিদায়কালে সেজেছি তাই গাঢ় রক্তিম গৌরবে

কোনো এক বিস্মৃত অতীতে
আমার নবীন শ্যামল আভার পানে
মুগ্ধ দীঘল আঁখি তুলে চেয়েছিল
এক লঘুপদ, চঞ্চল বাতাস কন্যা
নিরুক্ত ভাষায় কানে কানে বলেছিল – “ভালবাসি”
হতঃশ্বাস জীবনে এইটুকু শুধু সঞ্চয়।
তারপর কতবার, তারপর কতবার
দুর্বিনীত পায়ের তলায়
কাদার পিণ্ডের মত দলিত মথিত হয়েছে এ হৃদয়
তাই আজ ক্লান্তপ্রাণ আমি চাই অনন্ত বিশ্রাম

আর জন্মে পাতা নয়, বৃক্ষ হব
সর্বংসহা, হৃৎপিন্ডহীন, মহাপ্রাণ
হয়তো তবে বুঝি,
হয়তো তবে বুঝি পেরোতে হবে না আর কখনো মৃত্যুপরিখা..

অবশিষ্ট আমি – কবিতা

বন্ধুরা তোমাদের সাথে অনেকদিন কথা হয়নি। তাই ভাবলাম আমার জন্মদিনে একটা পোষ্ট তো দেওয়া প্রয়োজন। প্রতি জন্মদিনেই আমি একটু self-reflect করি যে মানুষ হিসেবে আর একটা বছরে ঠিক কতটা উত্তীর্ণ হলাম। সেই ভাবনা থেকেই এই লেখাটা।

 

আমার তো এতটুকু আমি

বাকি ছেড়ে এসেছি এ পথে

কিছু রাখা আমার শহরে

কিছু রাখা মরু পর্বতে

 

কিছু রাখা মায়ের আঁচলে

কিছু রাখা পূজোর ছুটিতে

স্কুলের মাঠেতে রাখা কিছু

কিছু রাখা স্মৃতির মুঠিতে

 

আমার যা অবশিষ্ট আমি

মুঠো করা জল যেন সে-ও

প্রতিক্ষণে গলে পড়ে কিছু

রোজ হারায় আমার পাথেয়

 

এখন তো মিথ্যের মুখোশে

আমারই সে ছায়া বয়ে চলা

আজ সব শব্দ ধার করা

কথা বলা নয়, হরবোলা

 

আমার আজ যাপন নয়

নিখাদ সুপটু অভিনয়

অজস্র মিথ্যের আড়ালে

দিনগত শুধু পাপক্ষয়

 

আজ যদি নিষ্ঠুর হাতে

মনটাকে করি ব্যাবচ্ছেদ

দেখতে পাব, জানি দেখতে পাব

ঈর্ষা, গ্লানি, মিথ্যে আর ক্লেদ

প্রবাস যন্ত্রণা – কবিতা

তোমারও কি প্রবাস যন্ত্রণা?

তোমারও কি মাঝে মাঝে

মন লাগে না কোনো কাজে

তাল কেটে যায় সুর লাগে না বীণায়?

 

তোমারও কি একলা বিকেল বেলায়

বাড়ির গলি মনে পড়ে

সামান্য মন কেমন করে

পসরা সাজিয়ে ভাসো স্মৃতির ভেলায়?

 

তোমারও কি ভোর বেলাতে কোনো

ঘুম চোখে ঘুম জড়িয়ে থাকে

হঠাৎ মনে পরে মা’কে

বিষণ্ন বিণ কোথায় বাজে যেন?

শ্যালক – ছড়া

আঠেরোর কুঁড়ে শীত কেমন কাটছে বন্ধুরা?  বছরটা কি ধরণের লেখা দিয়ে শুরু করব ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম একটা লঘু লেখা দিয়ে তরল পাঠক আর প্রিয়দর্শিনী পাঠিকাদের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করে দেখি। কবিতা মানেই আজকাল কবিরা সিরিয়াস, আবেগঘন লেখা বোঝে। যযাতির ঝুলি থেকেও গুরু গম্ভীর কবিতা বেরোয় মাঝে মাঝে। আপনারা পড়েছেন এবং অনেকে পছন্দও করেছেন বহুবার। কিন্তু হালকা, ফুল অফ হিউমার ছড়া সাহিত্যজগৎ থেকে হারিয়ে যাবে এটা যযাতির একান্ত অপছন্দ। তাই বছরের শুরুতে একটা হাসির ছড়া। ছন্দ নিয়ে একটু মুন্সিয়ানা করারও চেষ্টা করেছি। সুধী পাঠক পাঠিকারা টের পাবেন আশা করি। ছড়াটার নাম “শ্যালক”।

*********

সেন সাগ্নিক

         রেগে অগ্নি  – 

বলল ডেকে “ভাইরে অনীক

বিয়ে করে আমি তোর ভগ্নী

এত ভুগেছি যা আগে ভুগি নি

জ্বলে পুড়ে ছাই। অত্যাধুনিক।

বাপধন কোন রাগে বল দিক

গছালি কেন এই শোপিসটি ঠিক?

রেগে গেলে যেন খেপা কাপালিক  –

বলে মুখ করে অস্বাভাবিক

‘তুই মর, তোর কান কাগে নিক’।

পাকা ধানে মই দিয়ে নিই তো। পিক

ফেলি নিই তো তোর জামায়। শালিক

চড়াইনি তোর বাসায়। মানিক

কেন হাসছিস তুই ফিক ফিক?”

 

আমি বললাম “শালা ড্যাশ ড্যাশ

এবার কেমনটা দিয়েছি বাঁশ!

আমি শ্রী অনীক। আমায় রাগাস?

মনে পড়ে? তেরো, জানুয়ারী মাস

পা মাড়িয়েছি সেই ভীড় বাস

দিয়েছিলি গালি ‘শালা বদমাশ’

বললাম আমি – ভাল যদি চাস

ফিরিয়ে নে এই গালি। বারমাস

পারবি না সামলাতে ঐ বাঁশ।

শোনালি কথা তাও টকাস্‌ টকাস্‌।

প্রেম করে বিয়ে করেছিলি। ফাঁস

পরিয়ে দিয়েছি সেই থেকে ব্যাস্।

এখন কেমন রোজ বাঁশ খাস?”

 

আহা কি কাব্যি, আহা কি সমাস

সবাই বলো সাবাস সাবাস…