নীড়ে ফেরা

অরিত্র মোবাইলে দেশের খবর পড়তে পড়তে চায়ের কাপটায় লম্বা চুমুক লাগায়। আজ মনটা তার বেজায় খুশি খুশি। শিরায় উপশিরায় ধমনিতে যেন একটা গঙ্গাফড়িঙ তির তির করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোটবেলায় অ্যানুয়াল পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যেমনটা হত।  এই সবে লং ডিস্ট্যান্স ফোনটা শেষ করেছে সে। ডীলটা পাকা হয়ে গেল। অনেক পুরুষ ধরে বিশুদ্ধ কলকাতাবাসী সে। তার কোন ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা ঢাকা শহর থেকে গুটিয়ে বাটিয়ে কলকাতা চলে এসেছিল। বাসা বিনিময় করেছিল কোন এক তাহের আলির সঙ্গে। অরিত্রকেও যে সেইরকমই একটা কান্ড করতে হবে কে জানত। কিন্তু ঠাকুরের কৃপায় পাওয়া গেছে একজনকে। ভদ্রলোকের নাম বিনিত আগরওয়াল। মাড়োয়ারি। কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না প্রথমে। ব্যাটা বানিয়া বলছিল

“আপনার বাড়ি আমার পসন্দ আছে কিন্তু ওখানে গিয়ে হামি বেবসা জমাতে না পারলে আমার কি হোবে” এই সব। অরিত্র ওকে অনেক স্তোকবাক্য দিয়েছে।

“আপনার কাপড়ের দোকান এখানে রমরম করে চলবে। অনেক ঘর বাঙ্গালি আছে। অর্থাৎ কিনা শাড়ির ব্যাবসা চলতে বাধ্য। সেরম কোন শাড়ির দোকানও এখানে নেই। আপনি কলকাতা থেকে শাড়ি কিনে আনবেন আর এখানে তিন গুন দামে বিক্কিরি করবেন। এক বছরের মধ্যে আপনার বৌয়ের গলায় শেকলের মত মত মোটা সীতাহার বাঁধা। একদম অচলা লক্ষী আপনার বাড়িতে” ইত্যাদি।

ব্যাটা তাও গাঁইগুই করে। শেষমেষ ব্রহ্মাস্ত্রটা ছাড়ে অরিত্র। সঙ্গে সঙ্গে রাজি বিনিত। চায়ে আর এক চুমুক লাগিয়ে ঈপ্সিতাকে ডাকে সে। “ও গো শুনছো, পাকা কথা হয়ে গেল। আসছে বছরের মাঝামাঝি করে বিনিত-এর চৌরঙ্গির বাড়িটার পজেশান পাচ্ছি। আর এ বাড়িটা ওর। কদ্দিন পরে কলকাতা ফিরব..উফফ ভাবতেই পারছি না। প্যাকিং-ট্যাকিং চালু করো।”

এখন থেকে কি? দেরি আছে তো।

কই আর দেরি। যেতে সময় লাগবে না?

হুমম। তুমি যখন এ শহরে বাড়ি কিনছিলে তখনই বারণ করেছিলাম। বলে ছিলাম “কিনছ তো। কিন্তু এরম একটা ধরধরা গোবিন্দপুরে গিয়ে থাকতে পারবে তো কলকাতা ছেড়ে?” তখন তো কত জ্ঞান দিলে। “ইপ্সু, আমরা হবো গিয়ে আর্লি অ্যাডপ্টার। সব থেকে বেশি সুবিধে আমরা পাবো। সব থেকে বেশি লাভ আমাদের হবে।” হ্যানা তানা।

কি করবো? তখন তো এই নতুন শহরে কেউই আসতে চাইছিল না বলে জলের দরে জমি বাড়ি বিক্কিরি করছিল। লোভে পড়ে…

তো বছর তিনেকও তো হয়নি আমরা এখানে এসেছি। এর মধ্যে তোমায় কি ভুতে কামড়ালো যে ফিরে যেতে হচ্ছে? কি খারাপটা আছে এ শহরে শুনি?

কিছুই খারাপ নেই। সেইটাই সবচেয়ে বড় কারণ ইপ্সু।

সত্যিই তো নেই। চব্বিশ ঘন্টা ইলেক্ট্রিসিটী, জলের সমস্যা নেই, গ্রসারি টসারি অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারি

২৪ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আউট অফ দি ওয়ার্ল্ড চিকিৎসা ব্যাবস্থা – যোগ করে অরিত্র।

তারপর মে মাসের প্যাচপেচে গরম নেই। আগাস্ট সেপ্টেম্বর-এর রাস্তা উপচানো জল কাদা নেই।

ঠিক ঠিক। সবই ভাল। কিন্তু এ শহরে কোন খবর নেই ইপ্সু। ঘটনা নেই। দিন নেই রাত নেই। শহরের নাম শুনলেই মনে হয় জেলখানা। কোনদিন শুনেছ কোনো শহরের নাম হয় হান্ড্রেড অ্যান্ড টু?

তা বলতে পারো। হ্যাঁ, এখানে ফুচকা নেই। গড়িয়াহাটে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা শাড়ির দোকান নেই। চেৎলার মোড়ের মাছের বাজারের চিতল মাছ নেই।

তারপর এখানে সাউথ সিটি মল নেই, রাস্তার ধারের এগ রোল নেই, হাত বাড়ালেই দীঘা মন্দারমুনি নেই, পাটায়া-ফুকেট এর হলিডে প্যাকেজ নেই। নাহ, এখানে থাকা চলে না। এখানে মেড়োই ঠিক আছে।

কিন্তু মানালে কি করে ভদ্রলোককে? উনি তো বেঁকে বসেছিলেন।

আরে ব্যাবসায়ি মানুষ। ছাড়তেও পারছিল না। ওর দু কামরার বাড়ির বদলে আমি আমাদের এখানের বিশাল বাগান বাড়ি দিচ্ছি।

তবুও তো আসতে চাইছিলেন না।

একটা মোক্ষম অস্ত্র ছাড়লাম। বিনিত কাত।

কি বললে?

বলে দিলাম এখানে সরকার ইনকাম ট্যাক্স নেয় না।

এ বাবা, তুমি না যাতা এক্কেরে।

মিত্থে তো বলিনি। এখানে সব ট্রান্সাকশানই ডিজিটাল। তাই প্রতিটা টাকা হস্তান্তরেই ট্যাক্স কেটে নেয়। কিন্তু সেটা বলিনি ওকে। ট্যাক্স দিতে হয় না জেনে খুশি খুশি রাজি হয়ে গেল।

মনটা এখন আমারও বেশ খুশি খুশি লাগছে বুঝলে। আজ রাতে শেফ ইপ্সিতার হাতে তোমার জন্য বেনুদির চিকেন কষা।

বাহ। কিন্তু আমাদের বেরোতে হবে এই মাসেই। সাত মাসের পরে আর এয়ার ট্রাভেল করতে দেয় না। তোমার তো এখন তিন মাস চলছে।

ঠিক বলেছ। সেটা ভেবে দেখিনি। যেতে এখন কিরম সময় লাগছে?

ক্রেয়োজেনিক ইঞ্জিনে তিন মাস। মেসোজেনিক-এ দুই। কিন্তু ভাড়া ডাবল প্রায়।

যাক ভালই হল। আমার পেটে থাকা মিস্টুকে আর এম-বি-সি-ই হতে হল না।

সেটা কি?

Mars Born Confused Earthian!!

হ্যাঁ। সিরিয়াসলি। এই মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকে না। চলো এই আনন্দে আজ আমরা লুডো খেলি। জড়িয়ে ধরে অরিত্র ইপ্সিতাকে।

এই কি হচ্ছে। মিস্টু আছে না?  ছাড়ো। আর সিটি ১০১ এ  যে বাড়িটা কিনলে?

ওটা তো পচিশ-শো-পচিশের রিসেশানে কিনেছিলাম। কলকাতা থেকে ওখানে এখন তিন দিনেই যাওয়া যায় আজকাল। সামার হোম করে রেখে দেব। “এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব সেই চাঁদের পাহাড়” গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়লেই হল। পরে যদি দেখি তেমন যাওয়া-টাওয়া হচ্ছে না ভাড়া দিয়ে দেব। চলো এখন আমরা বেনুদিকে পাকড়াই।

ঈপ্সিতা রান্না ঘরের দিকে যায়। অরিত্র চায়ে চুমুক দিতে দিতে গুনগুনিয়ে গায়

“মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকে না।…সিন্ধু ঘোটক থাকে না…”

“মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকে না।…সিন্ধু ঘোটক থাকে না…”

index

সেল্ফি স্বরূপ

selfie

স্ব-বাবু মহারাজ যযাতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজ এই যে দিন-রাত অনবরত সকলের মুখে একটাই শব্দ শুনতে পাচ্ছি। “সেল্ফি”। এটি কি রূপ? এটি খায় না অঙ্গে মর্দন করে?”

মহারাজ যযাতি বললেন –

উত্তম প্রশ্ন বৎস। খুবই রুচিকর আর আকর্ষণীয় এই বস্তু। ইহার পেছনে ইতিহাসও অতি মনোরঞ্জক। ধরাধামে কলিকালে এক ধরনের প্রাণির উদ্ভব হয়েছে যারা নিজেদের মানুষ বলে দাবি করে। আকৃতিগত ভাবে মানুষদের সাথে সাদৃশ্য থাকলেও বাকি সকলই ভীষণরকম বিসদৃশ। আসল মানুষ যেখানে ফুল, পাখি, গাছ, পাহাড়, নদী দেখতে ভালবাসত এই মনুষ্য-সদৃশ জীব শুধু নিজেদেরই দেখতে ভালোবাসে। আমার অনুমান এরা বেদান্তের “আত্মানং বিদ্ধি” অর্থাৎ “নিজেকে জানো” এই মহান শ্লোকটির অনুসারি। তাই এরা নিজেকে জানার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন কোণ থেকে, বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে দেখতে উৎসাহী। এই নতুন প্রজাতির মানুষকে উত্তরমানব বা প্রায়-মানব বলা হয়। নিজেকে জানার এই ইচ্ছা এদের মধ্যে ক্রমে ক্রমে প্রবল থেকে প্রবলতর এবং অনধিক্রম্য হয়। প্রথম প্রথম এরা নিজেকে দেখার সাধ পুর্ণ করতে চিত্রকরকে দিয়ে নিজেদের চিত্রিত করাতো। অর্থাৎ নিজের ছবি আঁকাত। কিন্তু সে অতি সময় সাপেক্ষ ও ব্যায়-বহুল বলে বেশিরভাগ প্রায়-মানবকেই আয়ানায় নিজের মুখ দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হত। পরে এরা এদের উর্বর মস্তিষ্ক খাটিয়ে এক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলে যার নাম “চিত্র বন্দি যন্ত্র”। অর্থাৎ এটা এক ধরণের ছবি ধরার ফাঁদ। এই অত্যাশ্চর্য যন্ত্রের সাহায্যে যে কোন দৃশ্যকে ফাঁদে ফেলে বাক্স-বন্দি করা যায়। কোন কিছুর দিকে এই যন্ত্র তাক করে একটি বোতাম টিপলেই ব্যাস। সুড় সুড় করে সে দৃশ্য এসে বাক্সের মধ্যে ঢুকে যাবে, সাথে সাথে বাক্সের দরজা বন্ধ আর ছবি বাক্স-বন্দি। সে ছবি তখন বাক্সের মধ্যে যতই ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করুক না কেন, বাক্স থেকে বেরোনর কোন পথ নেই।

কোন কিছুর দিকে এই যন্ত্র তাক করে একটি বোতাম টিপলেই ব্যাস। সুড় সুড় করে সে দৃশ্য এসে বাক্সের মধ্যে ঢুকে যাবে, সাথে সাথে বাক্সের দরজা বন্ধ আর ছবি বাক্স-বন্দি। সে ছবি তখন বাক্সের মধ্যে যতই ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করুক না কেন, বাক্স থেকে বেরোনর কোন পথ নেই।

কিন্তু প্রথম প্রথম সে যন্ত্র আয়তনে বৃহৎ হওয়ায় নিজের দিকে তাক করে বোতাম টেপার সুবিধে হত না। তখন সাগরে, পাহাড়ে জাদুঘরে, বাজারে সর্বত্র যেকোন চেনা-অচেনা-অর্ধচেনা লোক দেখলেই এই প্রায়-মানবদের বলতে শোনা যেত “দাদা, আমার একটা ছবি তুলে দিন না” বলে তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই সেই ছবি বন্দি করার কলটা তার হাতে তুলে দিয়ে হাসিমুখে, ঘাড় বেঁকিয়ে বিভিন্ন নৃত্য বিভঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ত। এই ভাবেই কিছুকাল ধরে এরা নিজেকে দেখার এবং জানার তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল। কিন্তু অপরের সাহায্যের প্রয়োজন থাকায় সর্বতোভাবে নিজেকে জানতে পারছিল না অর্থাৎ যথেস্ট পরিমাণে নিজের ছবি তুলতে পারছিল না এবং তদহেতু অবসাদে ভুগছিল। ক্রমে ক্রমে এই যন্ত্র ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে একটি আঙ্গুর ফলের মত ছোট হল। এবং প্রায়-মানবদের আর এক আবিষ্কার দুরভাস যন্ত্রের মধ্যে স্থান পেল। তখন ঐ যন্ত্র নিজের দিকে তাক করেও নিজের চিত্র বাক্স-বন্দি করা সম্ভব হল। তখন প্রায়-মানবেরা সর্বপ্রকারে নিজেকে জানতে প্রয়াসী হল। সময়-অসময়, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় এরা নিজেদের পানে ঐ যন্ত্র তাক করে নিজেদের ছবি তুলতে লাগল। ইহাই “সেল্ফি”। অন্যের সাহায্য ব্যাতিরেকে নিজের স্বরুপ উদঘাটন করতে পেরে ইহাদের আনন্দের অবধি থাকল না। তখন মন্ত্রিমশাই থেকে মুচি-কসাই, টাটা-বিড়লা থেকে গরিব চা-ওয়ালা, রাজনীতিকার থেকে চোর পকেটমার, রাজা-গজা থেকে ভুমিহার প্রজা, কেস্ট-বিস্টু থেকে পটল, কেয়া, মিস্টু সকলেই ঘুমনোর সময়টুকু ছাড়া সর্বক্ষন সেল্ফি তুলতে থাকল।

তখন মন্ত্রিমশাই থেকে মুচি-কসাই, টাটা-বিড়লা থেকে গরিব চা-ওয়ালা, রাজনীতিকার থেকে চোর পকেটমার, রাজা-গজা থেকে ভুমিহার প্রজা, কেস্ট-বিস্টু থেকে পটল, কেয়া, মিস্টু সকলেই ঘুমনোর সময়টুকু ছাড়া সর্বক্ষন সেল্ফি তুলতে থাকল।

এমনকি কিছু কিছু প্রায়-অতিমানব গতিমান ট্রেন-এর সামনে বা উঁচু ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে সেল্ফি দ্বারা নিজেকে জানার প্রয়াস করে হাসি মুখে প্রাণ বিসর্জন দিতেও পিছপা হল না। শুধু তাই নয়, ইহারা এই পর্বত প্রমাণ সেল্ফি বা নিজস্বি সকলকে ইহাদের আর একটি আবিষ্কার আন্তর্জালের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে মর্তলোকের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে একই সাথে এরা সকল ভুভাগে দৃশ্যমান হল। এবং এক ধরনের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সবাই একে অপরকে অপূর্ব সুন্দর কিম্বা সুন্দরী বলে বাহবা দিয়ে নিজেদের আত্মগরিমা পুনঃ পুনঃ উজ্জীবিত করতে থাকল। তখন প্রায়-মানবেরা স্বোহম অর্থাৎ “আমিই সেই ব্রহ্ম” সেই পরম বোধে উত্তীর্ণ হয়ে আত্মজ্ঞানী হল। সচ্চিদানন্দের কৃপায় সৎ অর্থাৎ নিজের অস্তিত্বকে জানান দিতে নিজের চিৎশক্তি অর্থাৎ ইচ্ছাশক্তির সহায়তায় সেল্ফি আবিষ্কার করে এই প্রায়-মানবেরা আনন্দ লাভ করল এবং অনন্ত-আনন্দ-কারণ-সাগরে নিমজ্জিত হল।

শ্বাসকষ্ট

পৃথিবীর তাবড় তাবড় পরিবেশবিদদের ডেকে আনা হয়েছে। সাত দিনের চিন্তন শিবির খোলা হয়েছে। বিষয় পরিবেশ দুষণ নিয়ন্ত্রণ করা। পরিসংখ্যান বলছে গত এক সপ্তাহে কোটি কোটি ভারতবাসী শ্বাসকষ্টে ভুগছে। দু চারটে শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর খবর-ও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা যায় নি। কিন্তু হঠাৎ কি করে বাতাসে এতটা দুষণ এল তার কারণটা খুঁজে বের করতে বড় বড় বিজ্ঞানীরা শক্ত শক্ত অঙ্ক কষছে আর দাঁড়ি চুলকোচ্ছে। ওজোন স্তরেই কি ছিদ্র হল না কি ফসিল ফুয়েল পোড়ানোর জন্য বাতাসে কার্বন কণার পরিমাণ বৃদ্ধি সেই নিয়ে জোরদার তর্ক লেগেছে। কেউ কেউ ম্যাটল্যাব সিমুলেশান বানিয়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব প্রেডিক্ট করার চেষ্টা করছে। কেউ বা হ্যাডুপ ব্যাবহার করে একটা বিগডাটা ডাটাবেসে-এ বিশ্বের শেষ এক হাজার বছরের আবহাওয়া আর জলবায়ুর ডাটা ফীড করে হিউমিডিটি লেভেল-এর ওপর প্রেডিক্টিভ অ্যানালিসিস জব চালাচ্ছে। রাজনীতিকরা সব বলছে “এই নাকি আচ্ছে দিন?” এই দুষিত বাতাসের জন্য RAW পাকিস্তান অ্যাংগলটাও খতিয়ে দেখছে। কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না বাতাস হঠাৎ এত ভারী আর আর্দ্র হয়ে যাওয়ার কারণটা ঠিক কি? কেন শ্বাস নিতে গেলেই মনে হচ্ছে বাতাসে অক্সিজেন-এর সঙ্গে কি যেন মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষমেষ একটা চ্যাঙড়া ছোঁড়া, সে কয়েকদিন যাবৎ এক ক্ষীণকটি সুন্দরীর বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু ঠিক লাইন করতে পারেনি, সে বললে “আপনারা দেখছি বড়ই বেবুক। আমি জানি কি হয়েছে। সক্কলে সমস্বরে বলল “কি, কি, কি হয়েছে ভাই?” ছেলেটা বলল “ভয়ের কিছু নেই। সাময়িক সমস্যা। কেটে যাবে। 14th February-r পর। February মাসে রোজ রোজ এই রোজ ডে, টেডি ডে, চকলেট ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে এই সব সাপ-ব্যাঙ দিনের প্রভাবে বাতাসে ভালবাসার পরিমাণ একটু বেড়ে গেছে। তাই বাতাস একটু ভারি আর ভেজা। ভালবাসাটা কর্তব্য হয়ে গেলে সেটা পাপের থেকেও ভারি বোঝা। 14th February টা কেটে গেলেই দেখবেন দখিনা বাতাসের মত ফুরফুরে আর অ্যানুয়াল-পরীক্ষা-শেষ-হওয়া-মনের মত হালকা হাওয়া আবার বইবে।

ষড়যন্ত্র

নতুন দিল্লী থেকে পঞ্চাশ মাইল দুরে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড গোপন কক্ষে বসেছে আজ এই মীটিংটা। সর্বোচ্চ স্তরের গোপনীয়তা রাখা হয়েছে পুরো ব্যাপারটায়। গোপনীয়তা রক্ষার সব ব্যাবস্থা সুষমা স্বয়ং তদারকি করে নিয়ে মাথা নাড়লেন হালকা করে। দরজা খুলে দেওয়া হল। এক এক করে ঢুকছেন সকল মন্ত্রীরা আর সর্বোচ্চ পদাধিকারী আই-এ-এস অফিসাররা। তিন তিনটে চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে হচ্ছে সকলকে। একটায় বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ, পরেরটায় রেটিনা স্ক্যান আর তার পরেরটায় ডি-এন-এ পরীক্ষা করা হচ্ছে। একে একে এসে সবাই নিজের নিজের নির্দিস্ট আসন গ্রহণ করল। রাজু সকলকে সংক্ষেপে বলে দিল আজকের এই টপ সিক্রেট মীটিং-এর আলোচ্য বিষয়খানা। তারপরেই হাতে নমস্কার মুদ্রা নিয়ে তিনি ঢুকলেন। পাজামা, কুর্তা পরিহিত, ট্রিম করা ফ্রেঞ্চ-কাট দাঁড়ি। সঙ্গে সঙ্গে সব গুজগুজ ফিসফিস বন্ধ। গম্ভীর স্বরে বললেন


মিত্রঁ, আজকে আপনাদের এখানে আসার মহত্মপুর্ণ কারণ নিশ্চয়ই রাজু আপনাদের জানিয়েছে। মাথা নাড়ে সবাই। পরিকল্পনাটা সার্থক করতে আপনাদের কাউকে কাউকে হয়তো প্ল্যানটা না জেনেও কিছু কিছু কাজ অলরেডি করতে হয়েছে। রাজু সব রেডি তো?


হ্যাঁ, দাদা। সব ব্যাবস্থা হয়ে গেছে।


যাচ্ছেন যে সে খবর পাক্কা?


হ্যাঁ, দাদা। শতকরা একশ ভাগ নিশ্চিত। আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে কনফার্ম করেছি।


হুমম, কটার ফ্লাইট?


দাদা, পরশু..দিল্লী থেকে উড়বেন রাত নটায়। সিধে ডি সি।


গুড। সুষমা? পাসপোর্ট -এর ব্যাপারটা?


ইয়েস স্যার। সব ব্যবস্থা হয়ে আছে। আমরা “ছেলে পাঠিয়ে” আসল পাসপোর্টটা বদলি করে সে জায়গায় জাল পাসপোর্ট রেখে দিয়েছি। দিল্লী থেকে উনি খেচর হলেই পাসপোর্ট বিভাগে আমাদের চর পাসপোর্টটাকে ইনভ্যালিড বলে ঘোষণা করবে।


আমাদের হাতে কত সময় আছে?


স্যার, মাস তিনেকের বেশি ইনভ্যালিড রাখতে পারা খুব মুস্কিল?


“তিন মাস। হুমম। ওটাকে ছয় করার চেস্টা করুন। আর ওদিকে?” রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংস -এর প্রধান-এর দিকে তাকান তিনি।


আমরা সব রকম চেস্টা করছি স্যার। ওনার একটা ছবি আর ওনার আঁকা একটা ছবি দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টকে। আমাদের গুপ্তচর কনফার্ম করেছে যে প্রেসিডেন্ট অনেকক্ষন ধরে ছবি দুটো দেখেছেন। মহিলাদের ওপর ওনার আবার চিরকাল-ই একটু ব্যথা। So we think we are on target, sir.


গুড। ওনার তো তৃতীয় পক্ষ আছে। চতুর্থ নেবেন? কি মনে হয়? আমাদের শুধু তিন মাস সময় আছে এই সম্পর্কটা দাঁড় করানোর জন্য।


স্যার, সাধ্য মত চেস্টা চালাচ্ছি। মেলানিয়া যাতে ওনাকে সতীন বলে মেনে নিতে পারে তার জন্য আমাদের বেস্ট ম্যান মনবীরকে লাগিয়েছি।


গুড। গুড। পুরো ব্যাপারটার গোপনীয়তা যেন সর্বোচ্চ স্তরে থাকে।


অরুণ বলল “দাদা, বিমুদ্রিকরণ-এর থেকেও বেশী গোপন রাখা হচ্ছে।”


এতক্ষণে হাসি ফোটে তাঁর মুখে। বলেন “রাজু, তাহলে কি মনে হয়, প্রেসিডেন্টের সাথে ওনার বিয়েটা হয়ে উনি ওখানেই সেটল করে গেলে, মমতাহীন অখিল ভারতে আমাদের জয়ধ্বজা ওড়াতে পারবো?”


“দাদা, অখিল ভারত দখলের পথে একটাই বাধা – অখিলেশ।” বললেন রাজনাথ।

“ও নিয়ে ভেবো না। মোলায়েম করে ওর পেছনে হাতা দেওয়ার জন্য ওর বাবা মুলায়মকে নিয়েছি টীমে।”

যোগা

Facebook, twitter, instagram এর জটাজালে বিশ্বাত্মার সাথে সংযোগ
আর লাইক পেয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা
কলিযুগে এরই নাম যোগা…:-) 🙂