আঠেরোর কুঁড়ে শীত কেমন কাটছে বন্ধুরা? বছরটা কি ধরণের লেখা দিয়ে শুরু করব ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম একটা লঘু লেখা দিয়ে তরল পাঠক আর প্রিয়দর্শিনী পাঠিকাদের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করে দেখি। কবিতা মানেই আজকাল কবিরা সিরিয়াস, আবেগঘন লেখা বোঝে। যযাতির ঝুলি থেকেও গুরু গম্ভীর কবিতা বেরোয় মাঝে মাঝে। আপনারা পড়েছেন এবং অনেকে পছন্দও করেছেন বহুবার। কিন্তু হালকা, ফুল অফ হিউমার ছড়া সাহিত্যজগৎ থেকে হারিয়ে যাবে এটা যযাতির একান্ত অপছন্দ। তাই বছরের শুরুতে একটা হাসির ছড়া। ছন্দ নিয়ে একটু মুন্সিয়ানা করারও চেষ্টা করেছি। সুধী পাঠক পাঠিকারা টের পাবেন আশা করি। ছড়াটার নাম “শ্যালক”।
পরিবার ধর্ম পালন করতে শীতের রাত্তিরে বাঘ দেখতে গেলাম। শীতল শিকাগোর বড় পর্দায় চড়েছে “এক যে ছিল বাঘ” ছবিটির সিকুয়েল “বাঘ এখনও বেঁচে আছে”। বাইরে তখন কুচি কুচি বরফ পড়ছে। পারদ বলছে তাপমাত্রা ঋনাত্মক বারো। যাই হোক বাঘ দেখতে গেলে একটু আধটু কষ্ট তো সহ্য করতেই হয়। তাই গেলাম। ছবিটা চমৎকার। একটু বিশদে যেতে হচ্ছে তাই।
প্রথমেই বলি মানুষের নাম বাঘ, সিংহ, হাতি, গরু, ছাগল ইত্যাদি মনুষ্যেতর জীব হোক – এ আমার ঘোরতর অপছন্দ। তাই আপনাদের অনুমতি নিয়ে টাইগার ওরফে বাঘবাবুকে আমি এখন থেকে বাগবাবু বলে ডাকব। বেশ একটা বাঙ্গালি বাঙ্গালি নাম হবে। সিরিয়ার বর্ডারে তখন ভীষণ সিরিয়াস কেস। পঁচিশ জন ভারতীয় আর পনেরটা পাকিস্তানি সেবিকাকে দিয়ে নিজের সেবা করিয়ে নিচ্ছেন বাগের দাদি, আই মীন, বাগদাদি। উনি যে সে কেউ নন, আই-এস-সি বলে এক সন্ত্রাস সংস্থার পুরপ্রধান। না না আই-এস-সি মানে ইন্ডিয়ান স্কুল সার্ভিস টাইপ্স কিছু নয়, এটা গল্প লেখকের উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত আইসিস-এর ছদ্মনাম। এদিকে মার্কিন মন্ত্রক মাত্র সাত দিন সময় দিয়েছে। সাত দিন পরে বোম মেরে পুরো শহর উড়িয়ে দেবে। সাতদিনের মধ্যে উদ্ধার করতে না পারলে বন্দী নার্সরা সব ছবি হয়ে যাবে। তো আমাদের বাগবাবু হলেন গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা raw-এর এজেন্ট। তবে প্রাক্তন আর কি! এখন চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় উনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আই-এস-আই-এর এক প্রাক্তন এজেন্ট এক ক্ষীণকটি সুন্দরীকে সাত পাকে বেঁধে মানে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করে ইউরোপের কোন এক “ছবির মত সুন্দর” শহরে কিঞ্চিত দাম্পত্য অশান্তিতে আর কিঞ্চিত সুন্দরীসঙ্গলাভ জনিত সুখে কালাতিপাত করছিলেন। বাগদাদির কবলে পড়া নার্সদের দুর্গতি দূর করতে আমাদের বাগবাবু ছাড়া তো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার গতি নেই। তাই তলব পড়ে তাঁর। ওদিকে বাগবাবু তখন “বাঘের বাচ্চা”-কে নিয়ে অর্থাত কিনা জুনিয়র টাইগারকে নিয়ে পাহাড়ে স্কিয়িং করতে গিয়ে নেকড়ের কবলে পড়ে সিংহ বিক্রমে (“বাঘবিক্রমে” বলে কথা হয় কি? হলে সেটাই উপযুক্ত হবে) লড়াই করে শেষমেশ গোটা দশেক (সংখ্যাটা ভুল হলে মাপ করবেন, ঠিক গুনিনি) নেকড়েকে মেরে ফ্ল্যাট করে দিলেন। “লাস্ট বাট নট দি লীস্ট নেকড়ে”-টাকে যখন গাড়িবন্দি করে ফেললেন ততক্ষণে রক্ত পুরো গরম যাকে বলে পিয়োর অ্যাড্রিনালিন রাস। ওদিকে ওনার ক্ষীণকটি সুন্দরী সহধর্মিণী কিছু কম ক্যারিস্মাটিক নন। সি সি টি ভি ক্যামেরা একদিক থেকে আর একদিকে ঘুরে তাঁর দিকে ফিরে আসতে যতটুকু সময় লাগে সেইটুকু সময়ের মধ্যে গোটা চারেক ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে ঠাণ্ডা করে ফেললেন একটা মুদিখানার দোকানে। সি-সি-টি-ভি তে সুন্দরীর জিরো ফুটেজ। নো এভিডেন্স। প্রাক্তন হোক কি বর্তমান, এজেন্ট যখন তখন কিছু গোপনীয়তা তো বজায় রাখতেই হবে। তাই এই তৎপরতা। যাই হোক শেষমেশ বাগবাবু পঁচিশটা নার্সকে উদ্ধার করার অ্যাসাইনমেন্টটা নিয়েই ফেললেন। পরে তাঁর ভুবনমোহিনী স্ত্রীটিও পাকিস্তানি নার্সদের বাঁচাতে অকুস্থলে পৌঁছে যায়। তারপরে সে ভীষণ গোলমাল। ধুন্ধুমার কাণ্ড। প্ল্যান হল বাগবাবু সহ বাকি ভারতীয় এজেন্টরা তেল পরিশোধনাগারে চাকরি নেবেন এবং তারপরে একটি “কন্ট্রোল্ড ব্লাস্ট” অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ করে তাতে পুড়ে যাওয়ার অভিনয় করবেন। না না বাগবাবু ও তার টীম আসলে পুড়বেন না। মোটা করে অ্যান্টি ফায়ার জেল মেখে বিন্দাস থাকবেন। শুধু সেই সুযোগে ঐ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঢুকে পড়বেন যেখানে বাকি সব রুগী রুগিনিদের ঝেঁটিয়ে বের করে দিয়ে বাগদাদিবাবু নার্সদের দিয়ে নিজের নার্সিং করাচ্ছেন। একবার হাসপাতালে ঢুকতে পারলেই কেল্লা ফতে। গোটা পঞ্চাশেক আর্মড ম্যানকে পঞ্চত্ব প্রাপ্তি করানো বাগবাবুকা “বাঁয়ে হাত কা খেল”। শুধু একটাই মুস্কিল। তাঁর স্ত্রীকেও ওই পনেরখানা পাকিস্তানি সেবিকাকে উদ্ধার করতে দিতে হবে। তাই বাগবাবু অসাধ্য সাধন করলেন। ওনার ক্যালিবারের লোকের পক্ষেই এরকম ডিপ্লোম্যাটিক ফিট অ্যাচীভ করা সম্ভব। উনি একেবারে যাকে বলে সাপে নেউলে সম্পর্ক RAW আর ISI কে একসাথে কাজ করতে রাজি করিয়ে ফেললেন। জয়েন্ট অপারেশান হলে দু দলেরই লক্ষলাভ হবে। কোন দেশেরই বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হল না। অফ কোর্স আমাদের বাগবাবুর ওপর সারা দেশ ভরসা করে, বিদেশ মন্ত্রক কোন ছাড়! যাই হোক অপারেশানটা শুরু হওয়ার আগেই একটু কেঁচে গেল। আইসিসের তরফে তের বছরের একটা বাচ্চা ছেলে, হিউমান বম্ব হিসেবে ভরা বাজারে নিজেকে ওড়াতে গিয়ে পড়বি তো পড় পড়ে গেল বাগবাবুর সামনে। অপারেশান নার্সোদ্ধার গেল ভার মে। আমাদের বাগবাবু “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নেই” বাণীতে বিশ্বাসী। উনি লেগে পড়লেন হিউম্যান বম্ব হাসানকে উদ্ধার করতে। আইসিস-এর জঙ্গিরাই বা ছাড়বে কেন? ব্যাস উদম ক্যাঁচাল শুরু হল। হেভি মারামারি কাটাকাটি। সেই গোলমালে raw-এর ইরাকস্থিত একজন “deep asset” (কি যেন নাম ভুলে গেছি) খরচা হয়ে গেল। গেল তো গেল। বাগবাবু তো আছে। কোই পরোয়া নেহি। ভেবেছিলাম এর ফলে প্ল্যানে অন্তত কোন পরিবর্তন হবে কারণ “সিক্রেট raw এজেন্ট”-এর গোপনীয়তা তখন প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। ততক্ষণে শ দেড়েক জঙ্গির সাথে গান ফাইট, হাতাহাতি, ম্যান্ডেটরি কার চেজ সবই করে ফেলেছেন বাগবাবু। একেবারে খুলে আম করেছেন। অমন সুন্দর মুখ তিনি ঢাকতে যাবেনই বা কেন? কিন্তু ফরচুনেটলি বাগবাবুর প্রকৃত পরিচয় মোটেই টের পায় না জঙ্গি সংগঠন। সেটা বাগবাবুর ম্যাজিকাল চার্মও হতে পারে, আইসিস-এর বিরাট ইন্টেলিজেন্স ফেলিয়োরও বলতে পারেন, কিম্বা গল্পলেখকের মাথায় আসে নি সেটাও হতে পারে। যাই হোক প্ল্যানমাফিক তেলকলে বিস্ফোরণ করতে গিয়েও ভারতীয় দল প্রায় ধরা পড়ে যায় আর কি? বাধা দিতে আসলে আবার জঙ্গিদেরকে মেরে তুলোধোনা করে দেন বাগবাবু। তাতেও তাঁর প্রকৃত পরিচয় মোটেই উদ্ঘাটন হয় না। আইসিসের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড বাবু যখন তেলকলে আগুন লাগানোর দায়ে ভারতীয় দলের সব সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যায় তখন আর এক ছদ্মবেশী র এজেন্টের ছলাচাতুরীতে রক্ষা পায় বাগ অ্যান্ড কোং। তারপর পোড়ার ক্ষতর চিকিৎসা করতে ঢুকে পড়ে হাসপাতালে। যদিও হেঁটে হেঁটে যেভাবে “শান সে” ভারতীয় গোয়েন্দারা হাসপাতালে ঢুকলেন, তাতে মনে হল কোনরকম চিকিৎসা না হলেও দিব্যি চলে যেত তাঁদের। যাই হোক এবার দরকার হাসপাতালের একটা নক্সা। আই-এস-আই-এর এজেন্ট, বাগবাবুর সেই সুন্দরী পত্নী, সে দায়িত্ব পালন করলেন চওড়া কাঁধে। সেখানেও তিনি হেভি পেটালেন জঙ্গিদের। সিটি হল থেকে সেই ম্যাপ যোগাড় করতে গিয়ে আলুর দোষ যুক্ত আইসিসের সেই সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডকে খরচা করে দিলেন। এবারে কিন্তু তিনি সেই মুদিখানার দোকানে গুণ্ডা পেটানোর মত ভাগ্যবতী ছিলেন না। সি-সি-টি-ভি ফুটেজে ধরা পড়ে বাগদাদির হাতে বন্দী হলেন। ওদিকে আমাদের হিরো বাগবাবু ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় মেরে এনেছেন। ফুড পয়জনিং করিয়ে, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অর্ধেক জঙ্গিকে ঘুম পাড়িয়ে আর অর্ধেক জঙ্গিকে আমেরিকান সেনাবাহিনীকে টাইট দিতে অন্যত্র পাঠিয়ে বাসে করে নার্সদের নিয়ে প্রায় শহর থেকে বেরিয়ে গেছেন, এমন সময় দেখলেন বাগদাদি তাঁর সুন্দরী প্রাণাধিকাকে বেঁধে-টেধে ভরা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে আছেন। একেবারে বাসন্তী স্টাইলে পরিবেশিত আমাদের সকলের চোখের মনি ক্যাটরিনা। তাঁর ক্যাট আইয়ের সম্মোহন বাগবাবু রিয়েল লাইফেও অস্বীকার করতে পারেন নি, রীল লাইফেও পারলেন না। অতএব নার্স উদ্ধার টেম্পোরারিলি মায়ের ভোগে। বৌকে বাঁচাতে সমস্ত নার্সসহ, ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি এলীট গোয়েন্দাসহ ধরা দিলেন বাগদাদীর হাতে। মেয়েরা চিরকালই গণ্ডগোল পাকিয়েছে। রামায়ণ, মহাভারতের মত দুটো মহাযুদ্ধ হয়ে গেল নারীর সম্মান রক্ষার্থে। এখানেও সেই সুন্দরীই গেরো হয়ে দাঁড়ালো। যাই হোক, বাগদাদী কিন্তু ওদের প্রাণে মারলেন না। দয়ার শরীর তাঁর। একটা অসউইজের গ্যাস চেম্বার টাইপ্স কিছু একটার মধ্যে বাগবাবুকে ফেলে দিয়ে তাঁর সুন্দরী বৌকে নিয়ে চলে গেলেন। কিছু একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে টুঁড়ে গেলেন মনে হয়। বাগবাবুও ছুঁড়লেন পালটা চ্যালেঞ্জ। এদিকে আজকেই সপ্তম দিন। সময় কমে আসছে। মার্কিনিরা মাত্র আধ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। তারপরেই বোম মেরে সকলকে হালকা করে দেবে। তাই আবার শুরু ফাটাফাটি মারপিট। বাগবাবু খালি গায়ে প্রচুর জঙ্গিদের আবার প্রচুর মারধোর করলেন। শোনা যায় বাগবাবু ওরফে সল্লু ভাই ছবিতে পুরো অভিনয়ের জন্য অর্ধেক টাকা নেন আর জামা খোলার জন্য বাকি অর্ধেক। তার নিযুত কোটি অনুরাগিণীরা তার বডি-সডি দেখতে শুনেছি ভীষণ ভালবাসেন। সে অন্য কথা। শেষমেশ বাগ দাদা বাগদাদীকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেললেন। তারপর সব নার্স, হোস্টেজ সকলকে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি এজেন্টদের হাতে দিয়ে বাগ দাদা গেলেন বৌকে বাঁচাতে। মার্কিনি মিসাইলের ধ্বংসলীলা শুরু হওয়ার মিনিট খানেক আগে ফাইনালি বাস ভর্তি সকলে সেফ জোনে পৌঁছে যান বাগবাবুকে ছাড়াই। সেখানে ইন্ডিয়ান পাকিস্তানি এজেন্টদের একেবারে গলাগলি মাখামাখি ভাব। ISI-এর এজেন্ট ভারতের পতাকা তুলছে, RAW-এর এজেন্টরা পাকিস্তানি পতাকা তুলতে উৎসাহ দিচ্ছে – সে একেবারে জমে ক্ষীর। বাগবাবু এদিকে তাঁর ক্যাট-আই প্রাণাধিকাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন হাসপাতালের গোপন গহ্বরে। পরিচালক অবশ্যই বাগবাবুকে মেরে ফেলে আপামর ভারতবাসীকে চোখের জলে ভাসাতে চান নি। তাছাড়া প্রযোজকবাবু নিশ্চয়ই আর একটা “ব্লক ব্লাস্টার সিকুয়েল”-এর স্বপ্ন দেখছিলেন। তবে হুড়মুড় করে বোম পড়তে থাকা শহর থেকে বাগবাবু কিভাবে উদ্ধার পাবেন সেটা দেখানোর চাপ পরিচালক মশাই অবিশ্যি আর নেননি। ভালই হয়েছে। অলরেডি বাগবাবুর বিক্রম দেখে ফেলেছি প্রায় ঘণ্টা তিনেক। আরও দেখলে গুরুপাক হয়ে যেত। শুধু বছর ঘুরলে দেখা যায় সস্ত্রীক বাগবাবু অন্য এক ইউরোপিয়ান শহরে নদীর জলে পা ডুবিয়ে ফুর্তি করছেন। ছবি সমাপ্ত।
নাম দেখানোর সময় একটু নাচাগানা হল। ক্যাটরিনাদেবী সারা বছর ধরে দিনে শুধু দুটো করে লঙ্কা পোড়া খেয়ে অমন মোহিনী শরীর বানিয়েছেন, অমন লোভনীয় পাতলি কোমর বানিয়েছেন – তা ওনারও তো একটু সখ হতে পারে একটু গানের তালে কোমর দোলানোর। তাছাড়া নার্সরাও সব উদ্ধার পেয়ে গেছে। অতঃপর ঢিঙ্কা চিকা।
সব মিলিয়ে ভীষণই মনোরঞ্জক ছবি – টাইগার জিন্দা হ্যায়। শুধু টাইগারবাবু হেভি গান ফাইটের সময় একটু বুলেট প্রুফ টুফ পরে নিলে, আইসিস-এর একেবারে খোদ মুলুকে গিয়ে শুরু থেকেই হাঙ্গামা না মাচিয়ে আর একটু গোপনীয়তা অবলম্বনের চেষ্টা করলে এমনকি সন্ত্রাস সংস্থার প্রধান বাগদাদীবাবু যিনি কিনা মার্কিন গুপ্তচর সংস্থার জন্য একেবারে “হাই ভ্যালু টার্গেট” তিনি যদি একেবারে খুলে-আম রাস্তায় না ঘুরতেন, একটু গোপনীয়তা অবলম্বনের চেষ্টা করতেন তবে হয়তো ছবিটা আরেকটু সহ্য করা যেত।
****
বাধ্যতামূলক সতর্কীকরণঃ যযাতির ঝুলির সব লেখাই শতাধিক বার ফেসবুকে শেয়ার হয় সেটা তো সুধী পাঠক বা প্রিয়দর্শিনী পাঠিকা নিচের ফেসবুক শেয়ার বাটন দেখে বুঝতেই পারছেন। এত অকুণ্ঠ ভালবাসা দেওয়ার জন্য পাঠক পাঠিকাকে যযাতির আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনিও শেয়ার করুন। কিন্তু শেয়ার করার আগে নিচের কমেন্ট বক্সে (বেনামী হোক বা নাম সহ) একটি মন্তব্য ছেড়ে যান যাতে যযাতি তার যজমানদের একটু চিনতে পারে। যযাতি তার ফেসবুক পেজের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। পোস্ট ভাল না লাগলে আপনাকে ছাড় দেওয়া হবে, কিন্তু ভাল লাগলে কমেন্ট না করে শুধু শেয়ার করলে যযাতির অভিশাপে (বিবাহিত হলে দাম্পত্য কলহজনিত কারণে আর অবিবাহিত হলে বাবা মার দাম্পত্য কলহজনিত কারণে) আগামী রবিবার রবিবাসরীয় লুচি তরকারি থেকে বঞ্চিত হবেন। 🙂 🙂
স্ববাবু মহারাজা যযাতিকে জিজ্ঞাসা করলেন “প্রভু, মহামতি মনু লিখেছেন ‘ত্রিয়া চরিত্রম দেবা ন জানতি কুতঃ মনুষ্যঃ’ – হেঁ হেঁ তখন থেকেই বুঝি টাইপো অর্থাৎ কিনা typographical error-এর জন্ম। উনি নিশ্চয়ই “স্ত্রিয়া চরিত্রম” লিখতে গিয়ে ছড়িয়ে ফেলেছেন। তাই না?
মহারাজ যযাতি বললেন “না হে বৎস। কালি-কলম ইত্যাদি কি-বোর্ড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হওয়ার আগে পর্যন্ত হতভাগ্য লেখকেরা বানান-টানান আর একটু সিরিয়াসলি নিত। ত্রিয়া মানে হল গিয়ে বুদ্ধি বা মতি। মতি তিনপ্রকার – গুর্মতি, মন্মতি আর দুর্মতি অর্থাৎ কিনা শুভ বুদ্ধি, নির্বুদ্ধি আর দুষ্ট বুদ্ধি। যেহেতু বুদ্ধি স্ত্রী-লিঙ্গাত্মক শব্দ, তাই কলিযুগে বাঙালি নামক ক্ষুরধার বুদ্ধিধর এক ধরনের প্রাণী এটিকে “স্ত্রীয়া চরিত্রম” করে নিয়েছে। বিয়ে-থা তো করেছ বৎস। তো বুঝতেই পারছ কথাটাকে “স্ত্রীয়া চরিত্রম” করে নিলেও সত্যের অপলাপ তেমন হয় না।”
তা যা বলেছেন স্যার। দেখুন না, দুগগা ঠাকুর দেখতে যাবে বলে আমার বেটার হাফ গোটা দশেক শাড়ি কিনে ফেললেন। জিগেস করলাম “পুজোর চারদিনে তো চারটেই শাড়ি লাগবে” – তাতে উত্তর দিলেন “আরে বাবা সকাল-সন্ধে পড়তে হবে না?” আমি বললাম “তাহলেও সর্বসাকুল্যে আটটা”। আমার স্ত্রী বললেন “বিসর্জন কবে হয় এখন তার ঠিক নেই। তাই দু-তিনটে বাফার শাড়ি রাখতে হবে না?” বলুন স্যার এরপরেও যদি আমি বলি আমি আমার স্ত্রী-বুদ্ধি ইয়ে মানে আমার স্ত্রী-এর বুদ্ধির গতি এখনও বুঝতে পারিনি, কিছু ভুল বলা হবে স্যার?
যযাতি বললেন “ঠিক ঠিক। শাস্ত্র ছাড়, এই জন্যই কবিবরেরা বলে গেছেন – রমণীর মন বড় সাধনার ধন।” মানে নারীমন পেতে গেলে এবং বুঝতে হলে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।
“প্রভু, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিচিত্রগতি কি তবে নারীদের মন?”
“তবে প্রভু, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিচিত্রগতি কি তবে নারীদের মন?”
তার থেকেও বিচিত্রগতি হচ্ছে ইন্টার-ব্যালিস্টিক মিসাইল। কিম বাবু কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে কোরিয়া থেকে কুমায়ুন কিম্বা সাইবেরিয়া কি শিকাগো সফর করে। এই জন্যই বলিউডের কিং অব রোমান্স গেয়ে গেছেন “সফর কা হি থা ম্যায় সফর কা রাহা”। সে যাক। তবে এর থেকেও বিচিত্রগতি এক বস্তু আছে।
কি স্যার?
সেটি হল পাঠকের মন। আজ তোমার লেখা পড়ছে, কাল দুর-ছ্যা করবে। তাই ঠ্যাকায় পড়লেও কখনো পাঠককে ঠকাতে যেও না।
অরিত্র মোবাইলে দেশের খবর পড়তে পড়তে চায়ের কাপটায় লম্বা চুমুক লাগায়। আজ মনটা তার বেজায় খুশি খুশি। শিরায় উপশিরায় ধমনিতে যেন একটা গঙ্গাফড়িঙ তির তির করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোটবেলায় অ্যানুয়াল পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যেমনটা হত। এই সবে লং ডিস্ট্যান্স ফোনটা শেষ করেছে সে। ডীলটা পাকা হয়ে গেল। অনেক পুরুষ ধরে বিশুদ্ধ কলকাতাবাসী সে। তার কোন ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা ঢাকা শহর থেকে গুটিয়ে বাটিয়ে কলকাতা চলে এসেছিল। বাসা বিনিময় করেছিল কোন এক তাহের আলির সঙ্গে। অরিত্রকেও যে সেইরকমই একটা কান্ড করতে হবে কে জানত। কিন্তু ঠাকুরের কৃপায় পাওয়া গেছে একজনকে। ভদ্রলোকের নাম বিনিত আগরওয়াল। মাড়োয়ারি। কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না প্রথমে। ব্যাটা বানিয়া বলছিল
“আপনার বাড়ি আমার পসন্দ আছে কিন্তু ওখানে গিয়ে হামি বেবসা জমাতে না পারলে আমার কি হোবে” এই সব। অরিত্র ওকে অনেক স্তোকবাক্য দিয়েছে।
“আপনার কাপড়ের দোকান এখানে রমরম করে চলবে। অনেক ঘর বাঙ্গালি আছে। অর্থাৎ কিনা শাড়ির ব্যাবসা চলতে বাধ্য। সেরম কোন শাড়ির দোকানও এখানে নেই। আপনি কলকাতা থেকে শাড়ি কিনে আনবেন আর এখানে তিন গুন দামে বিক্কিরি করবেন। এক বছরের মধ্যে আপনার বৌয়ের গলায় শেকলের মত মত মোটা সীতাহার বাঁধা। একদম অচলা লক্ষী আপনার বাড়িতে” ইত্যাদি।
ব্যাটা তাও গাঁইগুই করে। শেষমেষ ব্রহ্মাস্ত্রটা ছাড়ে অরিত্র। সঙ্গে সঙ্গে রাজি বিনিত। চায়ে আর এক চুমুক লাগিয়ে ঈপ্সিতাকে ডাকে সে। “ও গো শুনছো, পাকা কথা হয়ে গেল। আসছে বছরের মাঝামাঝি করে বিনিত-এর চৌরঙ্গির বাড়িটার পজেশান পাচ্ছি। আর এ বাড়িটা ওর। কদ্দিন পরে কলকাতা ফিরব..উফফ ভাবতেই পারছি না। প্যাকিং-ট্যাকিং চালু করো।”
এখন থেকে কি? দেরি আছে তো।
কই আর দেরি। যেতে সময় লাগবে না?
হুমম। তুমি যখন এ শহরে বাড়ি কিনছিলে তখনই বারণ করেছিলাম। বলে ছিলাম “কিনছ তো। কিন্তু এরম একটা ধরধরা গোবিন্দপুরে গিয়ে থাকতে পারবে তো কলকাতা ছেড়ে?” তখন তো কত জ্ঞান দিলে। “ইপ্সু, আমরা হবো গিয়ে আর্লি অ্যাডপ্টার। সব থেকে বেশি সুবিধে আমরা পাবো। সব থেকে বেশি লাভ আমাদের হবে।” হ্যানা তানা।
কি করবো? তখন তো এই নতুন শহরে কেউই আসতে চাইছিল না বলে জলের দরে জমি বাড়ি বিক্কিরি করছিল। লোভে পড়ে…
তো বছর তিনেকও তো হয়নি আমরা এখানে এসেছি। এর মধ্যে তোমায় কি ভুতে কামড়ালো যে ফিরে যেতে হচ্ছে? কি খারাপটা আছে এ শহরে শুনি?
কিছুই খারাপ নেই। সেইটাই সবচেয়ে বড় কারণ ইপ্সু।
সত্যিই তো নেই। চব্বিশ ঘন্টা ইলেক্ট্রিসিটী, জলের সমস্যা নেই, গ্রসারি টসারি অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারি
২৪ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আউট অফ দি ওয়ার্ল্ড চিকিৎসা ব্যাবস্থা – যোগ করে অরিত্র।
তারপর মে মাসের প্যাচপেচে গরম নেই। আগাস্ট সেপ্টেম্বর-এর রাস্তা উপচানো জল কাদা নেই।
ঠিক ঠিক। সবই ভাল। কিন্তু এ শহরে কোন খবর নেই ইপ্সু। ঘটনা নেই। দিন নেই রাত নেই। শহরের নাম শুনলেই মনে হয় জেলখানা। কোনদিন শুনেছ কোনো শহরের নাম হয় হান্ড্রেড অ্যান্ড টু?
তা বলতে পারো। হ্যাঁ, এখানে ফুচকা নেই। গড়িয়াহাটে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা শাড়ির দোকান নেই। চেৎলার মোড়ের মাছের বাজারের চিতল মাছ নেই।
তারপর এখানে সাউথ সিটি মল নেই, রাস্তার ধারের এগ রোল নেই, হাত বাড়ালেই দীঘা মন্দারমুনি নেই, পাটায়া-ফুকেট এর হলিডে প্যাকেজ নেই। নাহ, এখানে থাকা চলে না। এখানে মেড়োই ঠিক আছে।
কিন্তু মানালে কি করে ভদ্রলোককে? উনি তো বেঁকে বসেছিলেন।
আরে ব্যাবসায়ি মানুষ। ছাড়তেও পারছিল না। ওর দু কামরার বাড়ির বদলে আমি আমাদের এখানের বিশাল বাগান বাড়ি দিচ্ছি।
তবুও তো আসতে চাইছিলেন না।
একটা মোক্ষম অস্ত্র ছাড়লাম। বিনিত কাত।
কি বললে?
বলে দিলাম এখানে সরকার ইনকাম ট্যাক্স নেয় না।
এ বাবা, তুমি না যাতা এক্কেরে।
মিত্থে তো বলিনি। এখানে সব ট্রান্সাকশানই ডিজিটাল। তাই প্রতিটা টাকা হস্তান্তরেই ট্যাক্স কেটে নেয়। কিন্তু সেটা বলিনি ওকে। ট্যাক্স দিতে হয় না জেনে খুশি খুশি রাজি হয়ে গেল।
মনটা এখন আমারও বেশ খুশি খুশি লাগছে বুঝলে। আজ রাতে শেফ ইপ্সিতার হাতে তোমার জন্য বেনুদির চিকেন কষা।
বাহ। কিন্তু আমাদের বেরোতে হবে এই মাসেই। সাত মাসের পরে আর এয়ার ট্রাভেল করতে দেয় না। তোমার তো এখন তিন মাস চলছে।
ঠিক বলেছ। সেটা ভেবে দেখিনি। যেতে এখন কিরম সময় লাগছে?
ক্রেয়োজেনিক ইঞ্জিনে তিন মাস। মেসোজেনিক-এ দুই। কিন্তু ভাড়া ডাবল প্রায়।
যাক ভালই হল। আমার পেটে থাকা মিস্টুকে আর এম-বি-সি-ই হতে হল না।
সেটা কি?
Mars Born Confused Earthian!!
হ্যাঁ। সিরিয়াসলি। এই মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকে না। চলো এই আনন্দে আজ আমরা লুডো খেলি। জড়িয়ে ধরে অরিত্র ইপ্সিতাকে।
এই কি হচ্ছে। মিস্টু আছে না? ছাড়ো। আর সিটি ১০১ এ যে বাড়িটা কিনলে?
ওটা তো পচিশ-শো-পচিশের রিসেশানে কিনেছিলাম। কলকাতা থেকে ওখানে এখন তিন দিনেই যাওয়া যায় আজকাল। সামার হোম করে রেখে দেব। “এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব সেই চাঁদের পাহাড়” গাইতে গাইতে বেরিয়ে পড়লেই হল। পরে যদি দেখি তেমন যাওয়া-টাওয়া হচ্ছে না ভাড়া দিয়ে দেব। চলো এখন আমরা বেনুদিকে পাকড়াই।
ঈপ্সিতা রান্না ঘরের দিকে যায়। অরিত্র চায়ে চুমুক দিতে দিতে গুনগুনিয়ে গায়
Office যাওয়ার আগে নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনাকে এই মজার ছড়াটায় একটু ধরার চেষ্টা করেছি। আপনাদের সকলের জীবনেই এটি কখনো না কখনো ঘটেছে। তাই আশা করি relate করতে পারবেন।