যেতে হবে

তবু চলে যেতে হবে ছেড়ে

অঘ্রাণের কোনো এক বিষণ্ণ দ্বিপ্রহরে

ছেড়ে যেতে হবে এই ঘাস-জমি, ধান-গোলা, খেত, ঘাট, খামার

দু ফোঁটা চোখের জল বরাদ্দ থাকবে শুধু আমার।

ঝরে যাব ঘাসের আঁধারে এক ফোঁটা শিশিরের মতো

আমার শরীর কুড়ে কুড়ে খাবে অগণিত বলিভুক্‌ যতো

এক প্রাচিন অশ্বত্থের ছায়াতে শুয়ে আমি একা – নির্বেদ

হেমন্তের মলয় সমীর যত্নে মুছে নেবে সঞ্চিত নাগরিক ক্লেদ।

 

দুরে কোথাও বাজবে ম্যান্ডেলিন

আমার অস্ফুট কান্নারা নিত্যদিন

সেই সুরে ঘুরে ফিরে সৃষ্টি করবে সুরের ইন্দ্রজাল

আমি তারাদের দিকে চেয়ে শুয়ে একা অনন্তকাল।

আমার যতো অসুয়া, হিংসা, অন্যায় দন্ড দান

যতো অভিনয়, মিথ্যা পরিচয় পাহাড়-প্রমান ফেলে যাব।

শকুনেরা খাবে কুড়ে কুড়ে।

এক ঘৃণাহীন পৃথিবীর গন্ধ থাকবে আমার সারা শরীর জুড়ে।।

বেয়াদব আওয়াজ

পাথর দিয়ে যত্ন করে বাঁধিয়েছি মনের ঘাট
রূপকথারা আসে না আর আজ
কান্না? সে তো মেয়েদের শোভা পায় –
এমনই শিখিয়েছে আমায় এই বেশ্যা সমাজ।
সামনে দিয়ে সোজা হেঁটে চলে গেলাম
যেন আমি “চির উন্নত শির”,
যেন আমি মিলিটারি “বুটের পরে বুট”
আমার উগ্র সুগন্ধে স্টেশানের বাতাস মদির।
“ক্যান ইউ প্লীজ হেল্প মী? আই নীড টু ইট”
এখন ভেসে আসছে অনেক দূর থেকে …
খেতে পায় না? যত্ত রাবিশ…শালা বজ্জাতের দল
বাড়িতে গিয়েই পাউডার শুঁকবে প্রত্যেকে।
মাথার মধ্যে আর একটা আওয়াজ বলে
হয়ত পাউডার শুঁকবে কিন্তু খেতে বোধ হয় পায়না বারো মাস
হয়ত খেতে না পেয়েই ছোট্ট বয়সে
করেছিল পাউডার শোঁকার অভ্যাস।
খেতে পেলে কি স্টেশানের বাইরে দাঁড়িয়ে
শিকাগোর শীতে বরফ গলা হাওয়ার ঝাপ্টা নিত?
খেতে পেলে কি আমার মতো শুয়োরের বাচ্চার
কাছে মাথা নোয়াতো?
ট্রেনে এক সোনালি চুলের পেছনে বসে আলগোছে রূপপান করি
আর ফিদেল কাস্ত্রোর লেখার পাতা ওল্‌টাই

আওয়াজটাকে যে মারতে হবে। এখুনি মারা চাই।

মেখলা তুমি

মেখলা, তুমি একলা বিকেলে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলে

মনে পড়ে?

মেখলা, তোমার হাতের নরমে আমার হাতকে আশ্রয় দিয়েছিলে

যত্ন করে

মেখলা, তুমি অষ্টমীতে নীল শাড়িতে আকাশ হয়েছিলে

মনে আছে?

মেখলা, তোমার কস্তুরী মৃগী গন্ধ পেতে আসতে চেয়েছিলাম

আরো কাছে

মেখলা, তুমি স্নানশেষে খোলা চুলে কার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলে

জানালাতে

মেখলা, সেই বৃষ্টিস্নাতা মিষ্টি তোমায় লুকিয়ে দেখেছিলাম

একা ছাতে

মেখলা, তোমার ঠোঁটের নরম ঠোঁটে নিয়েছিলাম

লুকিয়ে অন্ধকারে

মেখলা, তোমার বন জোছনা রুপ চোখে হারিয়েছিলাম

বারে বারে

মেখলা, তোমার কাঠবিড়ালী-লঘু পায়ের আলসেমিতে

নুপুর পরিয়েছিলাম

মেখলা, তোমার জীবন সাথী হবার

স্বপ্ন দেখেছিলাম

 

মেখলা, তোমার চড়ুই পাখি চোখ শান্তি দিয়েছিল

মেখলা, তোমার আলগা-খোঁপার বাঁধন খুলে বৃষ্টি নেমেছিল

মেখলা, তুমি পারো নি শেষে হিসেব করতে গিয়ে আমার নারী হতে

মেখলা, তবে আজ কেন কাঁদো উপুড় হয়ে শুয়ে প্রতিরাতে?

(প্রকাশিত)

ভুতদেখা

সন্ধ্যার অন্ধকারে বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম
আর হিসেব করছিলাম,
বোনাসের টাকা দিয়ে গাড়িটা বদলানো যায় কিনা।
হঠাত ভুত দেখলাম, হ্যাঁ, ভুত, আমারি ভুত
ভুত মানে তো অতীত, আমার অতীত –

বিশ বছর আগের আমি, ওর হাতেও সিগারেট
আমার হাতে ক্লাসিক মাইল্ড, ওর হাতে সস্তা কি একটা, নাম ভুলে গেছি
ভুত দেখে ভয় পেতে হয়, তাই একটু পেলাম
কিন্তু পরক্ষনেই উপলব্ধি করলাম ভয়টা আমার নয় ভুতেরই পাওয়া উচিত
সামনে যে ভুত টা দাড়িয়ে আছে, আমার ভুত, ওটা তো একটা রোমান্টিক ফুল
স্বপ্ন দেখে শ্রেনিহীন সমাজ পত্তনের, স্বপ্ন দেখে মুক্তির
শোষণ থেকে মুক্তি, অনাবশ্যক শাসন থেকে মুক্তি
অশিক্ষা থেকে মুক্তি, বৈষম্য সৃষ্টি করা শিক্ষাব্যাবস্থা থেকে মুক্তি
ক্ষুধার থেকে মুক্তি, ক্ষুধিত পাষাণদের থেকে মুক্তি
আমি চল্লিশ বছরের সফল পোড় খাওয়া বেসরকারি সংস্থার চাকুরে
আমি স্বপ্ন দেখি না, হিসেব করি
চুলচেরা হিসেব করে নিজের মুল্য বৃদ্ধি করি,
দেশেরও করি, বলে কমপক্ষে মনে করি।
ও কতগুলো বস্তাপচা আবেগপ্রবণ ধারনা নিয়ে দেশোদ্ধার করবে বলে নেমেছিল
ও নিজেকে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল
ক্ষুধার্ত মলিন মানুষের মত দেখতে মানুষেতর কিছু প্রাণীর জীবনে আনতে চেয়েছিল আলোকবর্তিকা
কিন্তু সমাজের নির্ভুল শৃঙ্খলা, অপ্রতিহত জয়রথ
ওই ভুতের মাথার ভুতটাকে মেরে বানিয়েছে আজকের এই মানুষটাকে
আমিও বিলোই কিন্তু মেপে,, সমাজসেবি সংস্থায় আমার ডোনেশান যায়
তফাত এটুকু যে নিজেকে বিলিয়ে দিই না
আমার আর আমার পরিবারের সামাজিক মর্য্যাদা বজায় রেখে দিই-থুই,
সত্যি কথা বলতে কি, আমার ডোনেশান-ও আমার
স্ট্যাটাস রক্ষার প্রয়াসেরি অংশবিশেষ।
ও বিপ্লব করতে চেয়েছিল
এই কপটচারি সমাজ যেটা, ছোটলোক আর বড়লোকের মধ্যে
পুরু কাচের দেওয়াল তুলে রেখে দারিদ্রকে মহান করতে কুমির কান্না কাঁদে
সেই নিঃশঙ্ক পদ্ধতিকে ভেঙ্গেচুরে নতুন করে গড়তে চেয়েছিল
ও বিত্তহীনদের অর্থহীন করে রাখার প্রকান্ড ষড়যন্ত্রের
হাটে হাড়ি ভাঙবার কথা ভেবেছিল
কিন্তু সে ভুতটা মরে গেছে, মরে এই মানুষটা হয়েছে
গভীরে কোথাও এই সফল মানুষটা বিশ্বাস করে

ওই পুরু কাচের দেওয়ালটা খুব কাজের
কাচের দেওয়ালটার ওদিকে খুব গোলমাল, রুষ্টতা, রিক্ততা, মরুঝড়
সেই বিশৃঙ্খলাকে আলিঙ্গন করব, তেমন মনের জোর কই
অর্থসামর্থ যত বেড়েছে, ব্যাস্তানুপাতিকভাবে কেড়ে নিয়েছে মানসিক সামর্থ
তাই বিপ্লব আমিও করি কিন্তু প্রধানত ফেসবুকে
ভণ্ড সমাজ ব্যাবস্থা, প্রতিকারহীন বিচারব্যাবস্থার বিরুদ্ধে গর্জে উঠি, ফেসবুকে।

আমার ভুতটা যতই গর্জাক কাচের ওপারে ঝড়ে দাঁড়িয়ে
আমি জানি ভুতগুলো মরেই হয়েছে কাচের এপারের মানুষগুলো
মৃত্যুর মতই দুর্ভেদ্য এই দেওয়াল, ও ভাঙতে পারবে না আমরণ
আর ভুত মরে মানুষ হবে
রোদ্দুর জল ঝড় পেছনে রেখে আসবে এধারে এই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে

তাই ভয় আমার নয়, আমার ভুতেরই পাওয়ার কথা
ওর আছে মন, আমার আছে বুদ্ধি
ওর আছে নীতি, আমার কুটনীতি
ওর আছে প্রাণের বন্ধু, আমার আছে প্রভাবশালী বন্ধু
ওর আছে বিস্মিত প্রাণ, আমার আছে হিসেবি মন
ওর আছে শেকল ভাঙার অভিলাষ, আমার আছে নিজেকে শৃঙ্খলিত করার মনোবল

আমি নিশ্চিত আমি স্বল্পায়াসেই এই ভুতটাকে মেরে ফেলতে পারব
আর তাতে আমার সমাজ, আমার মত দেওয়ালের এধারে থাকা সফল প্রবীণ মানুষেরা
আমায় সাহায্য করবে –
প্রাণপণ।

আমার তুমি

তুমি দুর আকাশে ঝিনুক হয়ে ফোটো
আমি ঘুম চোখেতে বিভোর হয়ে দেখি
তুমি শিউলি ফুলে শিশির হয়ে ভেজো
আমি তোমার গন্ধ শরীর জুড়ে মাখি

তুমি ঢেউ হয়ে এসে আছড়ে গায়ে পড়ো
আমি নিষ্ঠুর সেই আঘাত বুকে পাই
তুমি ভিজিয়ে দিয়ে আবার ফিরে যাও
আমার একলা বিকেলে তোমার প্রতিক্ষাই

তুমি আকাশ জুড়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরো
আমি মাতাল হয়ে দু চোখ বুজে ভিজি
তুমি দুর পাহাড়ে অলকানন্দা হও
আমি অধীর হয়ে উৎসখানি খুঁজি

তুমি মেঘ-চুলেতে কলাবতি ফুল গোঁজো
আমি ঐ মেঘের দেশে হারিয়ে যেতে চাই
তুমি পুর্ণিমাতে জোৎস্না হয়ে জোটো
আমি প্রাণের পরে স্পর্শ তোমার পাই

তুমি নীল শরীরে শঙ্খিনি সাপ হও
আমি ছোবল পেতে জিভ এগিয়ে দিই
তুমি শীতের দুপুরে কুসুম গরম রোদ
মেখলা, আমি মাদুর পেতে গা এলিয়ে দিই

অহল্যাকে

আজ হেমন্ত।
মহানন্দা নদীর ঘাটে ফুটে আছে ঘেঁটু ফুল,
অনাদৃতা;
একটা তিতির পাখি তার অস্থির ডানায়
পড়ন্ত বিকেলের বিষণ্ণ কমলা মেখে পথ ভুল,
অতন্দ্রিতা;
নদীর জলে পা ডুবিয়ে একলা বসে, মেখলা, তোমার কোমর ছড়ানো চুল।
আজ তুমি বিবাহিতা;
আজ তোমার আয়ত দুটি চোখ কান্না ধুধুল।
ওগো অবহেলিতা,
তোমার চোখের ভাষা বোঝেনি যে জন
তোমাতে তবু তারই আজ পূর্ণ অধিকার।
.
সেদিন ছিল ফাল্গুন।
সেদিন তোমার নরম আঙুল ছুঁয়েছিল আমার আঙুল,
তবুও সেদিন অপরিচিতা;
দুরে সুকনার জঙ্গলে ঘরে ফেরা পাখিদের গান আর অজস্র কুরচি ফুল,
অনাঘ্রাতা;
সেই বিকেলে আমার চোখে মহানন্দা, তবু ওই চোখেতে স্বপ্ন বিপুল।
এই ঘাটে বসে তুমি, আমি, না-বলা-কথা আর
আঙুল ছোঁয়া মুখর নীরবতা;
তুমি বাগদত্তা, ব্যথিতা, ভীতা তবুও বুঝি বা প্রতীক্ষায়
অনাগত, অচেনা সে কার চোখের ভাষা পড়বার !
.
হেমন্তের হিমেল হাওয়া হয়ে আজ যদি কাছে আসি,
আবার যদি ভালবাসি
মেখলা, তোমার মেঘলা চুলে জড়াই যদি বন ধুতরো ফুল
এই সূর্য-নেভা-রাতে
জ্বালতে পারো প্রাণের প্রদীপ আমার সাথে?
হতে পারো কলঙ্কিতা?
আজ খরস্রোতা, ভাঙন-পিয়াসী মহানন্দার ঘাটে
ভাঙতে পারো তোমার মিথ্যে সাজানো সংসার?

তোমায় আরও একবার

শ্যাওলার গন্ধের মত নিস্তেজ এক দুপুরবেলা
রূপনারাণের এক নির্জন বালুচরে
একটা ছাতিম গাছের ছায়ায়
তোমার কোলখানা মাথার বালিশ করেছি;
তোমার ভেজা শরীরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ভিজেছি,
সে বহুকাল হল।
.
তারপর বহুবার ওই বালুচর, এই বালুচর
বিধ্বংসী বন্যায় ভেসেছে;
সেই নিস্তেজ শ্যাওলা গন্ধা দুপুরগুলো
আজ নারকীয় আক্রোশে বিষ নিশ্বাস ফেলে;;
আজ প্রেতের মত আমার খুদিত শীতল উপস্থিতি।।
.
সেই ছাতিম গাছখানা গভীর সুষুপ্তি নিয়েছে
নদীটাও অনেক পা সরে গেছে
তবু আজ একটা জল চিঠি এসে বলে গেল –
রূপনারাণের জলে এখনও মিশে আছে তোমার অশান্ত চুম্বন।
.
তাই আজও বিশ্বাস করি
আরও একবার একটা শান্তির দুপুর পাব
আরও একবার তোমার মায়াবি উপস্থিতি রক্তে ছড়াবে উন্মাদনা।
আরও একবার তোমার চোখের শান্তিটুকু শুষে শ্রান্তি মেটাব;
আরও একবার মানুষ হব।
হবই।।

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে!!!

হতচ্ছাড়া

Office যাওয়ার আগে নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনাকে এই মজার ছড়াটায় একটু ধরার চেষ্টা করেছি। আপনাদের সকলের জীবনেই এটি কখনো না কখনো ঘটেছে। তাই আশা করি relate করতে পারবেন।


মোবাইল মহাশয় বড়ই সদাশয়,
যখন দরকার হয়, ডাকলেই দিয়ে দেয় সাড়া
মানিব্যাগ হতচ্ছাড়া, যদি করেছ কাছছাড়া,
লুকোচুরি খেলে তবে তারা
অফিস যাওয়ার কাল, সক্কাল সক্কাল,
হন্যে হয়ে তারে খুঁজি
এর থেকে সোজা করা, সোনার হরিণ ধরা
ট্রেন খানা মিস হল বুঝি
ঘড়ি ঘড়ি দেখি ঘড়ি, বাড়িঘর মাথায় করি,
কেমনে পাইব তার দেখা
হাত পা-ই হল নাকি, নেই কোথা খোঁজা বাকি,
নাকি শেষে মেলে দিল পাখা
বৈঠকখানা ঘুরে খুঁজি তাকে অন্তপুরে,
স্নানঘরে যাই তারপরে
বুঝি বা হারাল তবে, “কার্ড গুলো কি যে হবে”,
বুক ভয়ে দুরু দুরু করে
শেষমেশ খুঁজেখাজে, সোফার গদির খাঁজে
পেয়ে তারে সুখে গান গাই
“নয়ন সমুখে প্রভু থেকো, নয়নের কভু
মাঝখানে নিয়ো নাকো ঠাঁই”

বিশ্রাম

যত দূরে যাই
সমুদ্রের গুরু গুরু ধ্বনি শুনতে পাই
সব কাজ সারা হলে,
সব কথা বলা হলে
যাবো শুতে
ওই জলধিতে

সেখানেতে তুমি আমি নাই
পাপপুণ্য, বিচার, বিরোধ
নাই; নাই কোনো মানবিক বোধ
আছে শুধু,
শান্তিতে শোবার চারপাই

সেইখানে আকাশ
মেঘমুক্ত, বৃষ্টিবিহীন
সেইখানে মধুমাস
বারো মাস; সকল রাত্রি আর দিন
আধো-আলো, আধো-ছায়া, আলেয়ার মতো
সেখানে বিষণ্ণ বিভাস, বিলম্বিত

আর আছে খই-এর ছড়া
সাদা মুখ নিয়ে তারা ফিস্‌ফিসে বলে
রাম রাম রাম রাম রাম রাম মরা!